১৯৯৯ থেকে ২০০৭; অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট বিশ্ব শাসনের স্বর্ণযুগ। টানা তিন বিশ্বকাপ জয়ই শুধু নয়, পঞ্চাশ ওভারের ক্রিকেটে তারা ছিল অপ্রতিরোধ্য। আইসিসির বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় শিরোপার পাশাপাশি দ্বিপাক্ষিক সিরিজ, ত্রিদেশীয় সিরিজে তারা একচেটিয়ে পারফরম্যান্সে বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছিল। মার্কওয়াহ, রিকি পন্টিং, অ্যাডাম গিলক্রিস্ট, গ্লেন ম্যাকগ্রা, ব্রেট লি’রা হয়ে উঠেন স্বপ্নের নায়ক।
সেই স্বর্ণযুগ যখন চলছে তখনই মাঠের সবুজ ঘাসে পা মাড়ানো শুরু প্যাট কামিন্সের। ২২ গজে ব্যাট-বল নিয়ে জীবনের নতুন অধ্যায়ের পথ চলার সূচনা। নানা পথ মাড়িয়ে, নানা পথ ঘুরে সেই কামিন্স ২০১৫ সালে জিতেছিলেন বিশ্বকাপের মুকুট। সেবার কেবল খেলোয়াড় হিসেবে পেয়েছিলেন শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট। এবার অধিনায়ক হিসেবে শিরোপার হাতছানি তার সামনে।
অস্ট্রেলিয়ার যে শিরোপা পাওয়ার ঐতিহ্য, চ্যাম্পিয়নশিপের গৌরব তা মাইকেল ক্লার্কের হাত ধরে পুনরুদ্ধার হয় নিজেদের মাটিতে ৮ বছর পর। এবার কামিন্স সেই একই মঞ্চে দাঁড়িয়ে। তার নেতৃত্বে অজিরা উঠেছে আরেকটি বিশ্বকাপের ফাইনালে। ওয়ানডে ক্রিকেটে নিজেদের ষষ্ঠ শিরোপার খোঁজে অস্ট্রেলিয়া। আহমেদাবাদের ফাইনালে তাদের প্রতিপক্ষ ভারত। যারা বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত অপরাজিত, ধরা ছোঁয়ার বাইরে। প্রতিপক্ষ অস্ট্রেলিয়া বলেই তাদেরকে বেশ সমীহ করা হচ্ছে। কেননা ইতিহাসের পাতা উল্টালেই পাওয়া যাবে, অস্ট্রেলিয়া বড় মঞ্চে সব সময় ফেভারিট।
বড় ম্যাচে বিশেষ করে নক আউট পর্বে অস্ট্রেলিয়া জ্বলে উঠে আপন শক্তিতে, পেয়ে যায় ছন্দ। শিরোপা জিতেই শেষ হয় তাদের মিশন। এবারও ঠিক এমনভাবে এগিয়েছে তাদের সফর। প্রথম দুই ম্যাচে হার। এরপর প্রথম পর্বে বাকি সাত ম্যাচে দুর্দান্ত জয়। সেমি-ফাইনালেও আসে প্রত্যাশিত হয়। যদিও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ম্যাচটা ঝুলছিল পেন্ডুলামের মতো। এখন তারা শিরোপা জয় থেকে এক পা দূর।
এমনটা হয়েছিল ১৯৯৯ সালে মার্ক ওয়াহর দলের সঙ্গেও। স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে জয়ের পর নিউ জিল্যান্ড ও পাকিস্তানের কাছে দুই হারে তারা পিছিয়ে যায়। সুপার সিক্সে তাদের উঠা অনেকটাই অনিশ্চয়তায় পড়ে যায়। সেখান থেকে বাংলাদেশ ও ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়ে দ্বিতীয় দল হিসেবে তারা যায় সুপার সিক্সে। এরপর সুপার সিক্সে আবার তাদের ৩ জয়, ২ পরাজয়। সেমি-ফাইনালে তাদের প্রতিপক্ষ দক্ষিণ আফ্রিকা। ঐতিহাসিক সেই সেমির কথা তো মনে থাকার কথা সবারই। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ম্যাচ টাই করে সুপার সিক্সে পয়েন্ট টেবিলে এগিয়ে থাকায় তারা যায় চতুর্থবার বিশ্বকাপের ফাইনালে। এরপর ফাইনালে উঠে ১৯৮৭ সালের পর পেয়ে যায় দ্বিতীয় বিশ্বকাপের মুকুট।
সেবারের বিশ্বকাপের সঙ্গে এবারের সফরের অনেকটা মিল খুঁজে পাওয়া গেলেও কামিন্স খুব একটা আগ্রহ দেখালেন না কথা বলতে, ‘আসলে এটা আমি লম্বা সময় ধরে বলে আসছি। আসলে আমাদের ওখান থেকে খুব বেশি উপসংহার টানার সুযোগ নেই। কিন্তু যেভাবে শেষ করেছিল, সেভাবে শেষ করতে পারলে আমি খুশি হবো। হ্যাঁ, আমি ওটা পছন্দ করি। ’
তবে স্মৃতির পাতা উল্টে কামিন্স ফিরে গেলেন সেই স্বর্ণযুগে। যেখানে তিনটি বিশ্বকাপ জয়ের সুখস্মৃতি জড়িত তার সঙ্গেও, ‘ এটা দারুণ কিছু (বিশ্বকাপ জয়ের আনন্দ)। খুব বেশিদিন আগের নয়, আমরা ছোট ছিলাম। সেই দুর্দান্ত দলগুলো যারা ১৯৯৯, ২০০৩, ২০০৭ বিশ্বকাপ জিতেছিল। আগামীকাল আমাদের সামনে সুযোগ, যা সত্যিই উত্তেজনাপূর্ণ। অধিনায়ক হিসেবে বিশ্বকাপের ট্রফি উঁচিয়ে ধরা হবে পরম সৌভাগ্যের ব্যাপার। নিশ্চিতভাবেই সাফল্যের চূঁড়ায় উঠতে পারা হবে দারুণ কিছু।’
কামিন্স ২০১৫ সালেও জিতেছিলেন বিশ্বকাপ। এবার অধিনায়ক হিসেবে পূর্ণতা দিতে চান নিজের ক্যারিয়ার, ‘সেই সুযোগটি (বিশ্বকাপ) আমাদের রয়েছে। এর এমন একটি ইতিহাস রয়েছে যেখানে বিশ্বের সবগুলো দল অংশগ্রহণ করেছে। আপনার চার বছরে কেবল একবারই সুযোগ পাবেন। আপনার ক্যারিয়ার যদি লম্বা হয় তাহলে একবার বা দুইবার এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতে পারবেন। ২০১৫ সাল নিশ্চিতভাবেই আমার ক্যারিয়ারের হাইলাইট। হ্যাঁ আগামীকাল যদি জিততে পারি সেটা নিশ্চিতভাবেই বড় কিছু হবে।’
পাঁচ বিশ্বকাপ জিতে অস্ট্রেলিয়া এখন সবার ওপরে। নিজেদেরকে আরেকধাপ এগিয়ে নিতে আহমেদাবাদে ব্যাট-বলে আরেকটি ভালোদিন কাটালেই যথেষ্ট। ভারত ছেড়ে কথা বলবে না নিশ্চয়ই। তবে স্নায়ু স্থির রেখে কিভাবে শিরোপা জিততে হয় তা অজিদের থেকে আর ভালো কে জানে? তাদের সামনে এখন ইতিহাস, চ্যাম্পিয়নশিপের গৌরব ধরে রাখার চ্যালেঞ্জ।