এজাজ পাটেলের বল মিড অফে পাঠিয়ে মুমিনুল হকের দৌড়। রান নেওয়ার ডাক সাবেক টেস্ট অধিনায়কের। অপরপ্রান্তে থাকা বর্তমান অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত তাকিয়ে ফিল্ডার নিকোলসের দিকে। তার হাতে বল। রান নেওয়ার ইচ্ছাই নেই। অথচ মুমিনুল হক মাঝ ক্রিজে।
সতীর্থকে দেখে তার পেছনে যাওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা। কিন্তু নিকোলসের থ্রোতে টম ব্লান্ডেল উইকেট ভাঙেন ক্রিজে ঢোকার আগে। মুমিনুলের আরেকটি প্রতিশ্রুতিশীল ইনিংসের করুণ সমাপ্তি। মুমিনুলের ডাকে সাড়া দিলে ওই সময়ে শান্তকে রান আউট হতে হতো। কেননা ফিল্ডারের হাতে বল দিয়ে রান নেওয়া ছিল ঝুঁকিপূর্ণ।
শান্ত রান আউট হলে বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের চিত্র দিনশেষে যেমন আছে তেমন হতো কিনা সন্দেহ! তার অপরাজিত ১০৪ রানের ইনিংসে দলের রান ৩ উইকেটে ২১২। লিড ২০৫ রানের। তাতে স্বস্তি পরশ বয়ে যাচ্ছে স্বাগতিক শিবিরে। নিজের আউট নিয়ে মুমিনুলের ন্যুনতম কোনো কষ্ট নেই। বরং শান্ত সেঞ্চুরি পাওয়ায় বেশ খুশি।
এ বছর শান্ত তিন টেস্ট সেঞ্চুরি করেছেন। দুটি ওয়ানডেতে। বাংলাদেশের কোনো ক্রিকেটারের এক বছরে পাঁচ সেঞ্চুরির রেকর্ড নেই। শান্ত এবার ছাড়িয়ে গেছেন সবাইকে। শাহরিয়ার নাফিস, তামিম ইকবাল ও মুমিনুল হক যথাক্রমে ২০০৬, ২০১০ ও ২০১৮ সালে ৪টি আন্তর্জাতিক সেঞ্চুরি পেয়েছিলেন।
শান্তর অপর দুই সেঞ্চুরি এসেছিল ২০২১ সালে। শেষ দুই বছরে শান্ত পায়ের নিচের জমিন শক্ত করেছেন। ধারাবাহিক রান করছেন। প্রয়োজনে দায়িত্ব নিয়ে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে শান্তর এই পথচলায় খুশি সতীর্থ মুমিনুল। তাকে প্রশংসায় ভাসিয়ে মুমিনুল বলেছেন, ‘শান্ত গত ২-৩ বছর ধরে খুব ভালো ব্যাটিং করছে। এটা ধরে রাখা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। ও খেলা খুব ভালো বোঝে। নিজের খেলা সম্পর্কে খুব ভালো জানে। পরিস্কার মানসিকতায় থাকে। হোক টেস্ট, হোক ওয়ানডে। প্রতিপক্ষের পরিকল্পনা খুব ভালো বোঝে। আউটস্ট্যান্ডিং ইনিংস ছিল (আজকে)। ওরা যে চাপ সৃষ্টি করেছে তার মধ্যে খুব ভালো ব্যাটিং করেছে।’
উইকেট ব্যাটিং করার জন্য সহায়ক ছিল না। ফাঁটল ধরেছে। বল স্পিন হলেও ছোবল দিচ্ছে না। একেবারে ধীর গতির। এমন উইকেটে ধৈর্যের মূর্ত প্রতীক হয়ে কোনো বাজে শট না খেলে নিজের সামর্থ্যে আস্থা রেখে দ্যুতি ছড়িয়ে গেছেন। তাইতো প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়ের প্রশংসা পাচ্ছেন এ ব্যাটসম্যান।
কিউই দলের পেসার কাইল জেমিসন বলেছেন, ‘সে ভালো খেলেছে। আসলেই তাই না? বেশ নিয়ন্ত্রণে ইনিংসটি সাজিয়েছে। ইতিবাচক দিক হচ্ছে নিজের অপশনগুলো খোলা রেখেছিল। শট খেলেছে সঙ্গে সিঙ্গেলও নিয়েছে। দেখে দারুণ লেগেছে। সত্যি বলতে, বেশ মুগ্ধতা ছড়ানো। কোনো সুযোগ দেয়নি আমাদের। আজ রাতে অবশ্যই তাকে আটকানোর পথ খুঁজতে হবে আমাদের এবং কাল মাঠে তা কাজে লাগাতে হবে।’
এ ম্যাচে শান্ত বাড়তি দায়িত্বও পেয়েছেন। নিয়মিত অধিনায়ক সাকিব ও সহ-অধিনায়ক লিটন না থাকায় দলকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। নিউ জিল্যান্ডের প্রথম ইনিংসে ব্যাটিংয়ে তার অধিনায়কত্বের ছাপ ভালোভাবে ফুটে উঠেছে। আক্রমণাত্মক অধিনায়কত্বের পাশাপাশি ফিল্ডিং সাজানো, বোলার পরিবর্তন, ঝুঁকি নেওয়া সবকিছু ছিল তার মাঠ পরিচালনায়। আগামী মাসে নিউ জিল্যান্ড সফরে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টির দলেরও দায়িত্ব পেয়েছেন।
অধিনায়ক শান্তকেও মুমিনুল বেশ উচুঁতে রাখছেন তা তার কথায় বোঝা গেল, ‘(শান্তর ক্যাপ্টেন্সি) আপনারা আরও ভালো বুঝবেন। আপনারা বাইরে থেকে দেখেন। দল তো ভালোই খেলছে। ঐ হিসেবে চিন্তা করলে আমার মনে হয় ভালো। কারও সাথে কারও তুলনা করা যাবে না। একেকজনের থিওরি একেকরকম। আমার মনে হয় লিডার হিসেবে ও ভালো। যেটা ভালো বোঝে সেটাই করে। ভেতরের জিনিসগুলো বোঝে। অনেক ক্যাপ্টেন বোলারের কথা শোনে। ও ওর মতো করে।’
কঠিন পথ পাড়ি দিয়ে শান্ত নিজেকে থিতু করেছেন আজকের অবস্থানে। অফফর্মের কারণে বাদ পড়া। আবার দলে আসা। আবার বাদ পড়া সবকিছুই দেখেছেন। ম্যাচের পর ম্যাচ খারাপ সময় গেছে তার। কিন্তু তার নিবেদনে ঘাটতি পায়নি কেউ। অক্লান্ত পরিশ্রমের পর এখন সাফল্য সূর্যর দেখা পেয়েছেন। সামনে তার পথে আরও চ্যালেঞ্জ। মুমিনুলের বিশ্বাস সেই পথটাও শান্ত ভালোভাবে দলকে পরিচালনা করতে পারবেন।