খেলাধুলা

বাড়ছে ম্যাচ উইনার, ছুটছে লাল-সবুজের জয়রথ

বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের পালে নতুন হাওয়া লাগতে শুরু করেছে। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে যা বেশ স্বস্তির পরশ দিচ্ছে। ক্রিকেটের ছোট্ট ফরম্যাটে এক সময়ে বাংলাদেশের লড়াই ছিল কেবল নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার। নিজেদের সবচেয়ে স্বাচ্ছন্দ্যের ফরম্যাট ওয়ানডে ক্রিকেটে বাংলাদেশের পদচারণা বেশ আত্মবিশ্বাসী হলেও টি-টোয়েন্টিতে ছুটছিল ব্যাকগিয়ারে। খেলাটা অনেকটা সময় মাথার ওপর দিয়েই চলে যেত। লড়াই করার আগেই পথছুট।

এভাবে একসময় ম্যাচ হাতের নাগাল থেকে বেরিয়ে যায়। দুয়েকটি সাফল্য আসলেও পরাজয়ের স্তুপে তা ঢেকে যায় নিমিষেই। তবে লম্বা সময় কাটানোর পর তরুণদের হাত ধরে এ ফরম্যাটে ধারাবাহিক হতে শুরু করে বাংলাদেশ জাতীয় দল। টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশ এ বছর স্বপ্নের মতো কাটিয়েছে। নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে দুই টি-টোয়েন্টি এখনও বাকি আছে। ওই দুই ম্যাচ বাদে এ বছর জাতীয় দল ম্যাচ খেলেছে নয়টি। জয় পেয়েছে আটটিতে। হেরেছে কেবল একটি। 

এশিয়ান গেমসে জাতীয় দলের ক্রিকেটারদের পরিবর্তে তরুণ ক্রিকেটাররা অংশ নিয়েছিলেন। সেখানে তিন ম্যাচে জয় দুটিতেই। সব মিলিয়ে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে ১২ ম্যাচে জয় ১০টিতেই। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে অভাবনীয় এই সাফল্যের পেছনে রোজ ম্যাচ উইনার বাড়ছে। নিয়মিত একজন দায়িত্ব নিয়ে দলের জয় নিশ্চিত করছেন না। নিয়মিত একজনের পক্ষে উচুঁ মাপের পারফরম্যান্স করা কঠিন। সেই দায়িত্বটা এখন আরেকজন নিয়ে নিচ্ছে। তাতে যা হচ্ছে, ম্যাচ উইনারের সঙ্গে বাকিদের পারফরম্যান্সের যোগফলে সাফল্য ধরা দিচ্ছে। 

ঘরের মাঠে ইংল্যান্ডকে হোয়াইটওয়াশ করে টি-টোয়েন্টিতে বছর শুরু করে বাংলাদেশ। এ ফরম্যাটের বর্তমান চ্যাম্পিয়নদের স্রেফ উড়িয়ে দেয় সাকিব আল হাসানের দল। তিন ম্যাচে নায়ক তিন ক্রিকেটার। প্রথমটি নাজমুল হোসেন শান্ত (৩০ বলে ৫১)। পরের দুটি যথাক্রমে মেহেদী হাসান মিরাজ (১৬ বলে ২০ ও ৪ উইকেট) ও লিটন দাস (৫৭ বলে ৭৩)। শান্ত (১৪৪ রান) হন সিরিজ সেরা। 

আয়াল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজে বাংলাদেশ প্রত্যাশিত ফল পেলেও তিন ম্যাচের সিরিজে একটিতে হেরে যায়। জয় পাওয়া দুই ম্যাচে বাংলাদেশের নায়ক যথাক্রমে রনি তালুকদার (৩৮ বলে ৬৭) ও সাকিব আল হাসান (২৪ বলে ৩৮ ও ৫ উইকেট)। ২-১ ব্যবধানে জয় পাওয়া সিরিজের সেরা খেলোয়াড় তাসকিন আহমেদ (৮ উইকেট)। 

সিলেটে আফগানিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশের সিরিজটি নিয়ে প্রচুর আলোচনা হচ্ছিল। র‍্যাঙ্কিং এবং শক্তিমত্তায় আফগানিস্তান বাংলাদেশের থেকে কিছুটা এগিয়ে থাকায় কে ফেভারিট সে নিয়ে তুমুল আলোচনা। কিন্তু মাঠের ক্রিকেটে সাকিবের দল সব হিসেব পাল্টে দেয়। বাংলাদেশ ২-০ ব্যবধানে জিতে নেয় সিরিজ। এবার ম্যাচ উইনারের তালিকায় নতুন নাম, তাওহীদ হৃদয় (৩২ বলে ৪৭)। সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচে সাকিবের ১১ বলে অপরাজিত ১৮ ও বল হাতে ১৫ রানে ২ উইকেট। ৪ উইকেট ও ৩৭ রান করে সাকিব হয়ে যান সিরিজ সেরা। 

এরপর এশিয়ান গেমসে বাংলাদেশ বাংলাদেশ জেতে ব্রোঞ্জ পদক। ভারতের কাছে ম্যাচ হারলেও মালয়েশিয়া ও পাকিস্তানের বিপক্ষে জিতে যায়। টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের সবশেষ জয় নিউ জিল্যান্ডের মাটিতে স্বাগতিক দলের বিপক্ষে। টেস্ট, ওয়ানডের পর বাংলাদেশ কিউইদের মাটিতে জয় পেল টি-টোয়েন্টিতেও। ৫ উইকেটে অনায়াস জয়ের নায়ক শেখ মাহেদী হাসান। বল হাতে ১৪ রানে ২ উইকেট নেওয়ার পর ব্যাটিংয়ে ১৬ বলে অপরাজিত ১৯ রান তুলে দলকে জিতিয়েছেন মাহেদী।

জয় পাওয়া আট ম্যাচে ম্যাচ উইনারের সংখ্যাটা হয়েছে সাতজনে। কেবল সাকিবই একাধিকবার পেয়েছেন। বাকিরা একবার করে। এতে দলীয় একতা, দায়িত্ব নেওয়ার ক্ষমতা, সাহসিকতার প্রতিচ্ছবি ফুটে উঠেছে দারুণভাবে। লম্বা সময় ধরে খেলা শান্ত, লিটন, মিরাজ এগিয়ে এসেছে তা নিশ্চিতভাবে বড় খবর। সঙ্গে রনির মতো অভিজ্ঞ, মাহেদী ও তাওহীদের মতো তরুণরা মেলে ধরছেন বড় মঞ্চে যা বিরাট পাওয়া। তাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ভয়ডরহীন পারফরম্যান্স হচ্ছে যা এই ফরম্যাটে অনেক দিন ধরেই দাবি জানিয়ে আসছিল সমর্থকরা। 

নিজেদের পারফরম্যান্সে উজ্জ্বল ক্রিকেটাররা এখন হাসি ফুটিয়েছে তাদের মুখেও। নিউ জিল্যান্ডের মাটিতে পরাজয়ের গেরো ছুটিয়ে জয়ের দেখা পেয়েছে। মাউন্ট মঙ্গানুইয়ে পরের দুই ম্যাচে জিততে পারলে তা হবে অনন্য এক অর্জন। ২০২১ সালে ২৭ ম্যাচে ১১ জয় পেয়েছিল বাংলাদেশ। জয়ের হিসেবে সেটাই এখন পর্যন্ত সেরা প্রাপ্তি। এবার সুযোগ আছে সেই অর্জনকেও ছাড়িয়ে যাওয়ার। নতুন কোনো ম্যাচ উইনার কি এগিয়ে আসবেন?