খেলাধুলা

বিপিএল অভিষেকে রংপুরের নায়ক নিশাম

আসলেন, দেখলেন, জয় করলেন। রংপুর নতুন তিন বিদেশী ক্রিকেটারের মধ্যে দুজন গতকাল রাতে ঢাকায় এসে পৌঁছায়। তাদের আগে এসেছেন আরেকজন। এই ত্রয়ীর আজ একসঙ্গে অভিষেকও হলো। মাঠে নেমে রাখলেন গুরুত্বপূর্ণ অবদানও। তাতে দিনটি রঙিন হয়ে উঠলো রংপুর রাইডার্সের। চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সকে তারা হারিয়েছে ৫৩ রানে।

জিমি নিশাম, ইমরান তাহির ও রেজা হেনড্রিকস প্রথমবারের মতো বিপিএলে আসলেন। অভিষেকেই তারা দ্যুতিময়। জিমি নিশাম অলরাউন্ড পারফরম্যান্সে দলের নায়ক। ২৬ বলে ৫১ রানের পর বল হাতে ৩২ রানে পেয়েছেন ২ উইকেট। হেনড্রিকস ৪১ বলে করেছেন ৫৮ রান। এছাড়া ইমরান তাহিরের পকেটে ২৮ রানের বিনিময়ে গেছে ১ উইকেট।

তাদের জ্বলে ওঠার ম্যাচে রংপুর টস জিতে ব্যাটিং করতে নেমে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৩ উইকেট হারিয়ে ২১১ রান করে। জবাবে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স ২০ ওভারে ৬ উইকেটে ১৫৮ রানের বেশি করতে পারেনি। ৫৩ রানের জয়ে পয়েন্ট টেবিলে নিজেদের অবস্থান আরো মজবুত করলো নুরুল হাসান সোহানের দল। আট ম্যাচে এটি তাদের ষষ্ঠ জয়।

নিশাম দ্রুত রান পেলেও শুরুতে থিতু হতে সময় নিয়েছিলেন। সঙ্গে ভাগ্যকেও পাশে পেয়েছিলেন। প্রথম বাউন্ডারি পেতে তাকে খেলতে হয় ১০ বল। অবশ্য ওই বলে ফিরেও যেতে পারতেন। আল-আমিনের বলে ক্যাচ তুলেছিলেন । সীমানায় বিলাল খান সহজ ক্যাচ ফেলে নিশামকে জীবন দেন। ৯ রানে জীবন পাওয়ার পর তাকে আর থামানো যায়নি।

আল-আমিনের পরের লো ফুলটস বল সীমানা আছড়ে ফেলেন চোখের পলকে। এক বল পর আরেকটি চার পান লং অফে বল পাঠিয়ে। ১৯তম ওভারের শুরুটা হয় ছক্কা দিয়ে। আল আমিনের হাফ ভলি লং অন দিয়ে চোখের পলকে বাউন্ডারিতে পাঠান বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। এরপর শেষ ওভারে তার ব্যাটে ঝড় বয়ে যায়। বিলাল খানের দ্বিতীয় ও তৃতীয় বলে পান ছক্কা ও চার। এবং শেষ বলে ছক্কা মেরে পেয়ে যান ফিফটি। আর তার ২৬ বলে ৫১ রানের ইনিংসে দল পেয়ে যায় ২১১ রানের বিশাল পুঁজি। যা এবারের বিপিএলে প্রথম দলীয় দুইশ ছাড়িয়ে যাওয়া ইনিংস।

১৯৬.১৫ স্ট্রাইক রেটে সাজানো ইনিংসে ছিল ৫ চার ও ৩ ছক্কা মেরেছেন নিশাম। নিশামের ঝড়ে আড়াল হয়ে যায় সোহানের ২১ বলে ৩১ রানের ইনিংস। যেখানে ২ চারের সঙ্গে ১ ছক্কা পান রংপুরের অধিনায়ক।

অবশ্য রংপুর যে বড় কিছুর পেছনে ছুটছে তা ইনিংসের শুরু থেকে বোঝা যাচ্ছিল। দুই ওপেনার রনি তালুকদার ও রেজা হেনড্রিকস শুরু থেকে ছিলেন মারমুখী। পাওয়ার প্লে’তে দুজনের জুটির রান ৫২ চলে আসে। সপ্তম ওভারে এ জুটি ভাঙেন নিহাদুজ্জামান। রনি ১৭ বলে ৩ চার ও ১ ছক্কায় ২৪ রান করে আউট হন। তিনে নেমে সাকিব আক্রমণ অব্যাহত রাখেন। হেনড্রিকসও ছিলেন দ্যুতিময়। ২৬ বলে তাদের জুটির রান পঞ্চাশ ছুঁয়ে ফেলে।

এ সময়ে হেনড্রিকস তুলে নেন বিপিএলে নিজের প্রথম ফিফটি। ৪১ বলে ৫৮ রান করেন ৫ চার ও ৩ ছক্কায়। সাকিব ১৬ বলে ২৭ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলেন ৩ চার ও ১ ছক্কায়। ১৩তম ওভারে এই দুই ব্যাটসম্যানকে ফেরান পেসার সালাউদ্দিন শাকিল। সাকিব তার শর্ট বল তুলে মারতে গিয়ে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন। হেনড্রিকস ডিপ কভারে জস ব্রাউনের হাতে তালুবন্দি হন। সেখান থেকে সোহান ও নিশামের ৪৬ বলে ৮৯ রানের জুটি চট্টগ্রামের জন্য দুর্বোধ্য হয়ে উঠে।

বিশাল লক্ষ্য তাড়ায় চট্টগ্রামের শুরুটা ছিল ম্যাড়ম্যাড়ে। প্রথম ১০ ওভারে ৪৯ রান পায় ২ উইকেট হারিয়ে। পরের ১০ ওভারে তারা তোলে ১০৯ রান। দলকে শুরুতে ডোবানো সৈকত আলী পরে নিজেই অবশ্য উদ্ধার করেছেন। ওপেনিংয়ে নেমে প্রথম ১১ ওভারে কোনো বাউন্ডারি পাননি সৈকত। এ সময়ে ২৯ বলে তার ব্যাট থেকে আসে মাত্র ১৭ রান। তার মন্থর ব্যাটিংয়ে শুরুর দিকে দল পিছিয়ে পড়ে যা পরে বিরোভার করতে পারেনি চট্টগ্রাম।

অধিনায়ক শুভাগত হোমের সঙ্গে দুই রান নিতে গিয়ে রান আউট হওয়ার আগ পর্যন্ত ৪৫ বলে সৈকতের ব্যাট থেকে আসে ৬৩ রান। ১ চারের সঙ্গে নামের পাশে ডানহাতি ব্যাটসম্যান ৬ ছক্কা হাঁকান। মাঝে কুর্টিস ক্যাম্পার ২১ বলে ২৪ এবং শেষ দিকে শুভাগত হোম ১৩ বলে ৩১ রান করলে চট্টগ্রামের পরাজয়ের ব্যবধান কমে আসে। ঝড়ো ব্যাটিংয়ের পর বল হাতে সাকিব ২৪ রানে পেয়েছেন ২ উইকেট।