খেলাধুলা

সব ‘প্রথমের’ ভিড়ে এলোমেলো দুর্দান্ত ঢাকা

‘জিতবে ঢাকা, পারলে ঠেকা’ – যে স্লোগান নিয়ে দুর্দান্ত ঢাকার বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে যাত্রা শুরু হয়েছিল, ৩০ দিনের সফর শেষে স্লোগানটা স্রেফ রূপ নিল, ‘হারবে ঢাকা, পারলে ঠেকা।’ বড় আশা নিয়ে দুর্দান্ত ঢাকা বিপিএলে আসেনি তা দলের কোচ খালেদ মাহমুদ নিজের প্রথম সংবাদ সম্মেলনেই বলেছিলেন। কিন্তু হারার আগে তিনি হারতে চাননি। লড়াই করতে চেয়েছিলেন। চমকে দিতে চেয়েছিলেন। 

‘আমি এখনই বলব না চ্যাম্পিয়ন হতে চাই, নিশ্চিতভাবে সবাই চ্যাম্পিয়নের লক্ষ্যে দল গড়ে। কিন্তু চ্যাম্পিয়নটা লাক, প্রথম স্টেজটা সেমিফাইনাল খেলা ভালো ক্রিকেট খেলা। যেহেতু আমাদের নাম নেই, কাগজে-কলমে সবাই হয়তো ৬-৭ নম্বর দল বলবে- সেই হিসেবে আই ডোন্ট মাইন্ড অ্যাট অল। এই ধরনের দল নিয়ে কাজ করাটা বেশি আনন্দের থাকবে। কারণ, হারানোর ভয়টা খুব বেশি নাই। আমরা যেটাই করব, সেটাই আমাদের পাওয়া হবে।’

শুরুটা খালেদ মাহমুদের কথা মতোই হয়েছিল। টুর্নামেন্টের শিরোপাধারী কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সকে মাটিতে নামিয়ে দারুণ জয় পায় তাসকিন, শরিফুল, মোসাদ্দেক, নাঈমদের দুর্দান্ত ঢাকা। কিন্তু এরপর যা ঘটলো তাতে স্লোগানই পাল্টে দিতে শুরু করলেন সমর্থকরা। টানা ১১ ম্যাচে হার! স্রেফ হতশ্রী, অপ্রত্যাশিত। অথচ ঢাকার এই বিপিএল সফর ছিল অনেক ‘প্রথমে’ ঘেরা। টুর্নামেন্টে এর আগে কোনো দল টানা ১১ ম্যাচে হারেনি। হারের বিব্রতকর রেকর্ডে তারা শীর্ষে। টুর্নামেন্টের প্রথম দল হিসেবে তারাই বিদায় নেয় সবার আগে। টুর্নামেন্টের প্রথম দল তারাই যারা অধিনায়ক পরিবর্তন করে। 

এ তো গেল দলটির অপ্রাপ্তির দিক। প্রাপ্তিগুলোও জানা যাক, টুর্নামেন্টে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক তাদেরই ব্যাটসম্যানের। অ্যালেক্স রস ১১ ইনিংসে ৩৫২ রান করে রয়েছেন শীর্ষে। ব্যাটসম্যানের পাশাপাশি বোলিং ক্যাটাগরিতেও ঢাকার খেলোয়াড় শীর্ষে। ১২ ইনিংসে ২২ উইকেট নিয়ে সবার চেয়ে এগিয়ে শরীফুল ইসলাম। ৩১০ রান নিয়ে ব্যাটিংয়ে তিন পজিশনেও রয়েছে ঢাকার ওপেনার নাঈম শেখ। টুর্নামেন্টের প্রথম জয়, প্রথম হ্যাটট্রিকটাও হয়েছিল দুর্দান্ত ঢাকার। তাই বিপিএলের দশম আসরের স্মৃতি বেশ ভালোভাবেই আষ্ঠেপৃষ্ঠে জড়িয়ে থাকবে ঢাকা। 

ব্যক্তিগত অর্জন যা হয়েছে তা দলের সামষ্টিক অর্জনের চিত্র নয় অবশ্যই। দলগতভাবে তারা পুরোপুরি ব্যর্থ। ব্যাটিংয়ে দুরবস্থা, বোলিংয়ে নির্বিষ, সঙ্গে ফিল্ডিংটাও এলোমেলো। তিনে মিলে ঢাকা পুরো আসরেই ছুটেছে ব্যাকফুটে। শেষ কয়েক ম্যাচে ঢাকার অধিনায়ক ছিলেন তাসকিন। ডানহাতি পেসার আইকন হিসেবে খেললেও প্রত্যাশা মেটাতে পারেননি। ১২ ম্যাচে নিয়েছেন কেবল ১৩ উইকেট। 

দলের ব্যর্থতার জন্য তাসকিন কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছেন পুরো দলকেই, ‘এটা তো টিম গেম। দুজন-চারজন কোনো না কোনো জায়গায় খারাপ খেলেই ফেলছে। নাম নিব না। কারণ এটা টিম গেম। আজ এ খারাপ করেছে, কাল ও। একদিন আমি। এভাবে আমরা খারাপ করেছি। জেতা জেতা ম্যাচগুলো দূর্বলতার কারণে হেরে গেছি। এটা অবশ্যই ভালো অনুভূতি নয় অবশ্যই। ব্যাটিং বা বোলিং কোন জায়গায় হেরেই যাচ্ছে।’ 

প্রায় শেষ মুহূর্তে দল গড়া ঢাকা তেমন বিগ বাজেটের দল তৈরি করেনি। নামে, কাগজে কলমে বেশ পিছিয়ে তারা। তবুও ১২ ম্যাচে ১১ হার কোনোভাবেই কাম্য ছিল না, বলেছেন ফ্রাঞ্চাইজি মালিকেরা। পয়েন্ট টেবিলে তাদের যে অবস্থান ও বিবর্ণ চিত্র তা প্রত্যাশা ছিল না তাদেরও। এজন্য আপসেট হলেও খুব বেশি বিচলিত নন। প্রথমবার বিপিএলের অভিজ্ঞতা তিক্ততায় শেষ হলেও সামনে ভালো কিছু হবে বলেই বিশ্বাস রাখেন তারা।