খেলাধুলা

উড়ন্ত স্পেনকে হারাতে ইংল্যান্ডের যে রণকৌশল

ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপের গেল আসরের রানার্স-আপ ইংল্যান্ড। এবারও ফাইনালের মঞ্চে পা রেখেছে দলটি। এবার তাদের প্রতিপক্ষ ইউরোপের অন্যতম সেরা দল স্পেন। আসরে দুর্দান্ত খেলে ফাইনালের মঞ্চে পা রেখেছে লুইস দে লা ফুয়েন্তের দল। স্পেনের বর্তমান ফর্ম ইংল্যান্ডের জন্য হুমকিই বটে। স্পেনকে হারাতে কোন রণকৌশলে এগোতে পারেন গ্যারেথ সাউথগেট? দেখে নেওয়া যাক। 

উনাই সিমনের দুর্বলতার সুযোগ নেওয়া স্পেনের গোলপোস্টের নিচে বিশ্বস্ত হাত উনাই সিমন। স্পেনের হয়ে তিনটি বড় টুর্নামেন্টও খেলেছেন এই গোলরক্ষক। তবে তার দুর্বলতা চোখে পড়ার মতো। ২০২০ সালের ইউরোতে ক্রোয়েশিয়াকে একটি গোল উপহার দিয়েছিলেন সিমন। জাপানের বিপক্ষেও একই কাজ করেছিলেন। 

ফাইনালের মতো বড় মঞ্চে সিমন চাপে থাকবেন সেটা অনুমেয়। ইংল্যান্ডের প্রথম কাজটা হবে একের পর এক আক্রমণ করে সিমনের দুর্বলতার সুযোগ নেওয়া। ফিল ফোডেনকে আক্রমণের সামনে রেখে সিমনকে চাপে ফেলাই হবে ইংল্যান্ডের প্রধান কাজ।

রদ্রিকে আটকে রাখা লামিনে ইয়ামাল ও নিকো উইলিয়ামসের মধ্যে যোগসূত্র স্থাপনের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখেন রদ্রি। মিডফিল্ড থেকে পুরো খেলার নিয়ন্ত্রণ নিজের হাতে নিয়ে নেওয়ার আগেই ইংল্যান্ডের উচিত হবে রদ্রিকে আটকে রাখা। এই কাজটা করতে হবে হ্যারি কেইন ও জুড বেলিংহ্যাম জুটিকে। 

হ্যারি কেইন সাধারণত স্ট্রাইকার হিসেবে খেললেও অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার হিসেবেও তার সুনাম রয়েছে। সেক্ষেত্রে তার সঙ্গে জুটি বাঁধতে হবে বেলিংহ্যামকে। তাতে রদ্রির বল পাওয়ার সম্ভাবনা কমে যাবে। ইয়ামাল ও নিকোর আক্রমণের ধারও শিথিল হয়ে গেলে জয়ের সম্ভাবনায় এগিয়ে থাকবে গ্যারেথ সাউথগেটের দল।

পেনাল্টির প্রস্তুতি নেওয়া পেনাল্টিতে স্পেনের রেকর্ড খুব একটা ভালো নয়। এদিকে টাইব্রেকারে ইংল্যান্ড সাউথগেটের অধীনে চারটি ম্যাচের তিনটিই জিতেছে। অন্যদিকে স্পেন টাইব্রেকারে ঠিক উল্টো। যদিও তারা টাইব্রেকারেই নেশন্স কাপের শিরোপা জিতেছিল। তবে শেষ তিনটি বড় টুর্নামেন্টে মোটেই ভালো করতে পারেনি। এর মধ্যে কাতার বিশ্বকাপে মরক্কোর বিপক্ষে হেরে বিদায় নেওয়া অন্যতম।

ম্যাচে যদি খেলার ফল পক্ষে না আসার সম্ভাবনা থাকে, তাহলে ইংল্যান্ড হয়তো ম্যাচ টাইব্রেকারেই নিয়ে যাবে। আগের জয়ের আত্মবিশ্বাস কাজে লাগিয়ে ফাইনালেও তারা বাজিমাত করে দিতে পারে যদি জর্ডান পিকফোর্ড আবারও পূর্ব-প্রস্তুতি নিয়ে নামেন।

বেঞ্চ খেলোয়াড়দের সদ্ব্যবহার সেমিফাইনালে নেদারল্যান্ডসকে বিদায় করে দেওয়ার পিছনে সবচেয়ে বড় ভুমিকা রেখেছে বেঞ্চ।  ৯০ মিনিটের সময় অলি ওয়াটকিন্সের সেই গোল ইংল্যান্ডকে তুলে দিয়েছে ফাইনালে। অথচ ওয়াটকিন্স পুরো আসর কাটিয়েছেন বেঞ্চে বসে। ফাইনালে এই ভুল করা চলবে না সাউথগেটের। 

ফাইনালে বেঞ্চের খেলোয়াড়দের সঠিক ব্যবহার বদলে দিতে পারে ম্যাচের গতিপথ। সেমিফাইনালে ওয়াটকিন্স ছাড়াও গ্রুপ পর্বে স্লোভাকিয়ার বিরুদ্ধে বেঞ্চ থেকে উঠে এসে জাদু দেখিয়েছেন ইভান টোনি। ফাইনালের মতো মঞ্চে তাই সাউথগেটকে অবশ্যই তার হাতে থাকা বিকল্প খেলোয়াড়দের সম্পূর্ণ ব্যবহার করতে হবে।

এক্ষেত্রে সাউথগেটের জন্য সবচেয়ে বড় অপশন হতে পারে এভারটনের উইঙ্গার অ্যান্থোনি গর্ডন। এবারের আসরে মাত্র এক ম্যাচেই মাঠে নামার সুযোগ পেয়েছিলেন গর্ডন। খেলেছিলেন মাত্র ৫ মিনিট। যাকে নিয়ে প্রতিপক্ষের কোনো পরিকল্পনা থাকার কথা নয়। গর্ডনকে নিয়ে তাই সাউথগেটের বাজিটা ফলে যাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি থাকছে। 

ইয়ামালকে নজরে রাখা ইংল্যান্ডকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে কাজটা করতে হবে সেটা হলো ইয়ামালকে নজরে রাখা, কড়া মার্কিংয়ে তাকে ব্যতিব্যস্ত রাখা। একটু জায়গা পেলে ১৬ বছরের এই কিশোর কি করতে পারে সেটা দেখা গেছে ফ্রান্সের বিপক্ষে। তাই ইংলিশ রক্ষণভাগকে সর্তক থাকতে হবে সর্বদা।

সাউথগেটের ৩-৪-৩ ফরমেশন যদি ফাইনালেও বজায় থাকে, তাহলে ইয়ামালের কাজটা সহজ হয়ে যাবে। সেক্ষেত্রে তাকে যতটা কম জায়গা দেওয়া যায় সেটা দেখার দায়িত্ব নিতে হবে কাইরান ট্রিপিয়ারকে। এটা করতে গিয়ে নিকো উইলিয়ামসকে ভুলে গেলে চলবে না। সেক্ষেত্রে কাইল ওয়াকার হতে পারেন সেরা অপশন।