খেলাধুলা

সতীর্থরাও জানতেন না, যেভাবে আসে সাকিবের সিদ্ধান্ত 

দুপুর ১টা নাগাদ বাংলাদেশ টিমকে বহনকারী বাস ঢুকলো কানপুর গ্রিনপার্ক স্টেডিয়ামে। ড্রেসিংরুমে এসে সাকিব আল হাসান হাঁটা দিলেন গ্রিনপার্কের প্রেস কনফারেন্স কক্ষের দিকে। সাকিব যখন এই পথে তখনো সতীর্থরা জানতেন না কী হতে যাচ্ছে। 

বৃহস্পতিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) দুপুরে ভারতের কানপুরে সাকিব সংবাদ সম্মেলনে ঘোষণা দেন, দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টেস্ট সিরিজই তার শেষ। নিরাপত্তার নিশ্চয়তা না পেয়ে যদি দেশে ফিরতে না পারেন তাহলে কানপুরই শেষ হতে যাচ্ছে সাদা পোশাকের ক্যারিয়ার। আর টি-টোয়েন্টির শেষে দেখে ফেলেছেন সদ্য সমাপ্ত বিশ্বকাপেই। 

সাকিবের অবসরের সিদ্ধান্ত কিভাবে আসে? বেশ কদিন ধরে সাকিব বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) প্রেসিডেন্ট ফারুক আহমেদের সঙ্গে বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছিলেন সাকিব। এর আগে রাওয়ালপিন্ডিতে প্রধান নির্বাচক আশরাফ হোসেন লিপুকে প্রথম জানান বিষয়টা। চেন্নাই টেস্ট চলাকালীন শুরু হয় জোর আলোচনা। বিসিবি পরিচালক নাজমুল আবেদীন ফাহিম, কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে ও নির্বাচক হান্নান সরকারসহ একটি বৈঠক হয়। 

এই বৈঠকে সাকিবের টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের শেষ নিয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়। সবশেষ বুধবার (২৫ সেপ্টেম্বর) রাতে কানপুরে টিম হোটেল ল্যান্ডমার্কের রুপটপ রেস্টুরেন্টের ডিনার টেবিলে আজকে ঘোষণা দেওয়ার বিষয়টির চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়। ডিনার টেবিলে সাকিবের সঙ্গে ছিলেন অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত, নির্বাচক হান্নান সরকার, মিডিয়া ম্যানেজার রাবিদ ইমাম ও ফিজিও বায়জিদ ইসলাম।

ডিনার টেবিলে আলোচনা হয় ,যেহেতু অবসর নেওয়া সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন সাকিব নিজেই, তাই ঘোষণায় না দেরি করাই ভালো। সেখানে থাকা এক সদস্য রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘সাকিবের এই বিষয়টি গত কয়েক দিন ধরে আলোচনা চলছিল। বোর্ডের সঙ্গে সে যোগাযোগ রেখেছে। আমরা গতকাল রাতে সিদ্ধান্ত নিয়েছি আজকে ঘোষণা দেওয়ার বিষয়টি। জানিয়ে দেওয়া ভালো মনে করেছেন সাকিবও। যেহেতু সাকিব নিজেই সম্মতি দিয়েছেন তাই দেরি করতে চাইনি কেউই।’ 

অবসরের ঘোষণা আজই আসবে এটি অধিনায়ক শান্ত ছাড়া কোনো ক্রিকেটার জানতেন না। সাকিবের অবসরের সিদ্ধান্তের সঙ্গে জড়িত থাকা এক সদস্য রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘সাকিব যখন ড্রেসিংরুমে ফেরেন, সংবাদ সম্মেলনে যান তখনো কেউ ধরতে পারেনি বিষয়টি। আমরা কয়েকজনই শুধু জানতাম। অতি গোপনীয়তার সঙ্গে করা হয়েছে। ক্রিকেটাররা জানতে পেরেছে সাকিব ড্রেসিংরুমে যাওয়ার পর।’ 

কোনো কষ্ট বা অভিমান থেকে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সাকিব? সেই উত্তর অবশ্যই নিজেই দিয়েছেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার, ‘না কষ্ট বা অভিমান থেকে নয়। আমার মনে হয় এটাই সঠিক সময় মুভ অন করার জন্য, নতুনদের আসার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য। একইসাথে টি-টোয়েন্টিতেও আমার একই ধরনের চিন্তা। বোর্ডের সবার সাথেও কথা হয়েছে। এটাই সেরা সময় টি-টোয়েন্টি থেকেও আমি মুভ অন করার।’ 

‘আমি বাইরের ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগগুলো খেলি ৬ মাস বা ১ বছর। এর মধ্যে নতুন প্লেয়াররা সুযোগ পাক, নতুন প্লেয়াররা আসুক। এরপর যদি বোর্ড মনে করে আমার টি-টোয়েন্টিতে অবদান রাখার সুযোগ আছে তাহলে আমরা বসে আলোচনা করতে পারি। আমি নিজেকে টি-টোয়েন্টিতে দেখছি না। দক্ষিণ আফ্রিকা যেহেতু টেস্ট সিরিজ, আমার ইচ্ছা আছে লাস্ট সিরিজ হবে। দুই ফরম্যাটে আমার শেষটা আমি দেখছি’-আরও যোগ করেন সাকিব। 

ভারতের উত্তর প্রদেশের কানপুরে সাকিব এর আগেও খেলেছেন। ২০১৬ সালে আইপিএলের কলকাতা নাইট রাইডার্সের হয়ে গুজরাট টাইটান্সের বিপক্ষে খেলেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার। যদি দেশে ফেরার নিরাপত্তা না পান তাহলে এখানেই থামবে ক্রিকেটের অভিজাত সংস্করণে সাকিবের পথচলা!