খেলাধুলা

রাজনীতি থেকে সাকিবকে ফেরাতে পারেননি সালাউদ্দিনও

রাজনীতিতে আসছেন সাকিব আল হাসান। এমন খবর যখন বাতাসে ঘুরপাক খাচ্ছিল তখন তার শৈশব গুরু মোহাম্মদ সালাউদ্দিন স্রেফ একটা কথাই বলে দেন, ‘রাজনীতিতে আসা যাবে না। অন্তত খেলা চলাকালীন রাজনীতি নয়।’

কিন্তু ‘বড় হয়ে যাওয়া’ সাকিব শোনেননি গুরুর নির্দেশ। এ নিয়ে আফসোসের শেষ নেই সালাউদ্দিনের, ‘এই একটা ব্যাপারেই (রাজনীতিতে) আমি সব সময় সাকিবের বিরুদ্ধে ছিলাম। কোনোদিন আমি তাকে সাপোর্ট করিনি। একবার অনেকদিন তার সঙ্গে কথাও বলিনি। বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি আমি বুঝি, তাই কখনোই ওকে ওখানে দেখতে চাইনি।’

দেশের ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় মহাতারকা, বিশ্ব ক্রিকেটের অন্যতম পোস্টারবয় সাকিব। কেন তাকে রাজনীতিতে আসতে হবে সেই উত্তরটাও খুঁজে পান না সালাউদ্দিন, ‘একান্তই ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত ছিল। জানি না কেন নিয়েছে। খেলা ছাড়ার পর যদি করতো তাহলে অন্য ব্যাপার ছিল। কিন্তু খেলা চালু রাখা অবস্থায় রাজনীতি সাপোর্টই করি না। অনেকবার না করেছি। দুর্ভাগ্যজনকভাবে হয়নি। একটা সময়ে ছেলেরা যখন ছোট থাকে তখন সব কথা শুনে। বড় হয়ে যাওয়ার পর তো সব কিছু আমার নিয়ন্ত্রণে থাকে না। আমার বুঝানোটা আমি বুঝিয়েছি। তারপর তার সিদ্ধান্ত সে নিয়েছে।’ - বলতে থাকেন সালাউদ্দিন।

আওয়ামী লীগের হয়ে নৌকা মার্কায় নির্বাচনে প্রার্থী হয়ে সংসদ সদস্য হয়েছিলেন সাকিব। পরবর্তী সময়ে সরকার পরিবর্তনের পর আদাবর থানায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় নিহত হওয়া পোশাককর্মী রুবেল হত্যা মামলায় সাকিবকে আসামি করা হয়েছে। সেপ্টেম্বরের ২৪ তারিখে পুঁজিবাজারে প্যারামাউন্ট ইনস্যুরেন্সের শেয়ার লেনদেনে কারসাজির মাধ্যমে সিকিউরিটিজ আইন ভঙ্গ করায় সাকিবকে ৫০ লাখ টাকা জরিমানা করে বাংলাদেশ সিকিউরিটি অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন।

নানা জটিলার কারণে সাকিবের দেশে ফেরা হুমকির মুখে। দেশে ফিরলেই যে বাইরে আবার যেতে পারবেন সেই নিশ্চয়তা নেই। সেই নিশ্চয়তা সাকিব বিসিবির থেকে চাইলেও বিসিবি সাফ জানিয়েছে, এই এখতিয়ার তাদের নেই। ফলে তার দেশে ফেরার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। এজন্য অবসরের মতো কঠিন সিদ্ধান্তও নিয়ে ফেলেছেন। দেশে ফিরতে না পারলে আজ থেকে শুরু হওয়া কানপুর টেস্টই তার ক্যারিয়ারের শেষ টেস্ট হয়ে থাকবে।

গতকাল সাকিবের অবসরের খবরটা শুনে সালাউদ্দিন রীতিমত হতবাক হয়ে পড়েন। লম্বা সময় কারও সঙ্গে কথা বলেননি। মোবাইলে ফেনের পর ফোন আসলেও তিনি সাড়া দেননি। শিষ্যের এমন বিদায়ী সিদ্ধান্তে রীতিমত বুকের ভেতরটা এলোমেলো হয়ে যাচ্ছিল তার। কিন্তু কোনো উপায় নেই। নিয়তিকেই মেনে নিয়েছেন তিনি,  ‘দুদিন আগেও তার সঙ্গে কথা বলেছি। সে আমাকে কিছুই বলেনি। নরম্যালি সে সব বলে। এটা বলেনি। যদি বলতো হয়তো আমি পরিবর্তন করার চেষ্টা করতাম। এজন্য হয়তো কিছু বলেনি।’

‘আমি হতবাক হলেও সাকিব ওর ভালোটা বোঝে। ও জানে যে ও কি করতে চাচ্ছে, কিভাবে কি করবে, কিভাবে নিজের জীবনকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। সেই হিসেবে বলবো সে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং সে বুঝতে পেরেছে তার কি করা উচিত। তার সিদ্ধান্তকে সমর্থন করা উচিত।’ - বলে যেতে থাকেন সালাউদ্দিন।

রাজনীতিতে নাম লিখিয়ে নিজের বিপদ সাকিব নিজেই ডেকেছেন বলে মনে করেন শৈশব গুরু। ক্রিকেটের পাশাপাশি এতো ঝামেলায় জড়িয়ে মাঠে মনোযোগ রাখা কঠিন। এমন দাবি তুললেন সালাউদ্দিন, ‘পরিস্থিতি যেভাবে যাচ্ছে সেভাবে একটা মানুষের জন্য ক্রিকেট খেলা কঠিন হয়ে যাচ্ছিল। এতো কিছু মাথায় নিয়ে ক্রিকেট খেলাটা কঠিন। একটা সমস্যা হলে ঠিক আছে। এরকম বহু সমস্যা থেকে পার হয়েছে। কিন্তু এখন অনেক সমস্যা একসাথে। সাকিবের নিজের হাতেও কিছু নেই। এতো কিছু মাথায় নিয়ে খেলাটা কঠিন হয়ে যাচ্ছে ওর জন্য। মানসিকভাবে হয়তো আপসেট। কিন্তু জিজ্ঞেস করলে কখনই বলবে না। সবকিছু বিবেচেনা করে এখনই সঠিক সময় ছিল।’