ঘরের মাঠে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টেস্ট খেলে বিদায় নিতে চান সাকিব আল হাসান। এমন আকুতি জানিয়ে সঙ্গে জুড়ে দিয়েছেন শর্ত। দেশে যাওয়া এবং আসা; দুটোই যেন স্বাভাবিকভাবে করতে পারেন কিংবা আরও স্পষ্ট করে বললে, দেশে থাকাকালীন নিরাপদ অনুভব করা এবং দেশে ফিরলে প্রয়োজনে দেশ ছাড়ার নিশ্চয়তা পেলেই টেস্ট সিরিজ খেলতে সাকিব আসবেন বাংলাদেশে।
কিন্তু, বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) সাফ জানিয়েছে, সাকিব দেশে ফিরলে, আবার বাইরে যেতে পারবে কি না, সেই নিশ্চয়তা দেওয়ার এখতিয়ার তাদের নেই। সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে এই নিশ্চয়তা আসতে হবে। সাকিবকে নিয়ে এমন ধুম্রজাল তৈরি হয়েছে তার আরেকটি পরিচয়ের কারণে।
আওয়ামী লীগের হয়ে নৌকা মার্কায় নির্বাচনে প্রার্থী হয়ে সংসদ সদস্য হয়েছিলেন সাকিব। পরবর্তী সময়ে সরকার পরিবর্তনের পর আদাবর থানায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় নিহত হওয়া পোশাককর্মী রুবেল হত্যা মামলায় সাকিবকে আসামি করা হয়েছে।
সেপ্টেম্বরের ২৪ তারিখে পুঁজিবাজারে প্যারামাউন্ট ইনস্যুরেন্সের শেয়ার লেনদেনে কারসাজির মাধ্যমে সিকিউরিটিজ আইন ভঙ্গ করায় সাকিবকে ৫০ লাখ টাকা জরিমানা করে বাংলাদেশ সিকিউরিটি অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন। নানা জটিলার কারণে সাকিবের দেশে ফেরা হুমকির মুখে। দেশে ফিরলেই যে বাইরে আবার যেতে পারবেন সেই নিশ্চয়তা নেই।
এদিকে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া রোববার (২৯ সেপ্টেম্বর) সাকিবকে নিয়ে এক প্রশ্নের উত্তরে যা বললেন তাতে দেশের ক্রিকেটের সেরা তারকার দেশে ফেরার সম্ভাবনার আকাশে কালো মেঘ জমে গেল।
সচিবালয়ে শ্রম মন্ত্রণালয়ে গ্রামীণফোনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ এবং চেকগ্রহণ অনুষ্ঠানে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘খেলোয়াড় সাকিবের যথাযথ নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই আছে। তবে, ফ্যাসিস্ট সরকারের সংসদ সদস্য সাকিব আল হাসানের বিপক্ষে জনমনে তৈরি হওয়া ক্রোধের বিপরীতে নিরাপত্তা দেওয়ার নিশ্চয়তা চাওয়া অবান্তর।’
সাকিবকে মোদ্দাকথা পথ দেখিয়ে দিয়েছে বিসিবি এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়। বলটা এখন তার কোর্টেই। দেশে ফিরলে হয়তো আইনি জটিলতার ম্যারপ্যাচে পড়বেন। তখন অনেক দুয়ারই বন্ধ হয়ে যাবে তার। তবে সাকিবকে তার রাজনৈতিক অবস্থান স্পষ্ট করার আহ্বান জানিয়েছেন ক্রীড়া উপদেষ্টা,
‘উনার রাজনৈতিক পরিচয়ের কারণে জনগণের মধ্যে যদি ক্ষোভ থাকে, তাহলে…। মনে করেন আমার নিরাপত্তায় পাঁচজন পুলিশ কনস্টেবল থাকে, একজন গানম্যান থাকে। আমার উপরে যদি দেশের ১৬ কোটি মানুষের মধ্যে দশ কোটি জনগণের ক্ষোভ থাকে, তাহলে এই পাঁচ ছয়জন আমাকে কী নিরাপত্তা দেবে? আমারও সেই ক্ষেত্রে নিরাপদ থাকার সুযোগ নেই।’
‘উনাকে উনার বিষয়টা পরিষ্কার করা প্রয়োজন, রাজনৈতিক জায়গা থেকে। উনার যে রাজনৈতিক অবস্থান… ইতোমধ্যে মাশরাফি বিন মর্তুজা কথা বলেছেন সে বিষয়টি নিয়ে। জনগণের পক্ষ থেকে যদি নিরাপত্তার ঝুঁকি থাকে, সেটার (নিশ্চয়তা) কেউ কাউকে দিতে পারবে না, শেখ হাসিনাকেও দেওয়া যায়নি, দেশ ছেড়ে পালাতে হয়েছে। সেই জায়গাটা, রাজনৈতিক বিষয়টা, পরিষ্কার করা উচিত বলে আমি মনে করি।’