খেলাধুলা

৩২ রানেই ৪ উইকেট হারিয়ে দিন শেষ করলো বাংলাদেশ

::: সংক্ষিপ্ত স্কোর ::: বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: ৩৮/৪ (৯ ওভার) দক্ষিণ আফ্রিকা: ৫৭৭/৬ ডিক্লে. (১৪৪.২ ওভার)

দক্ষিণ আফ্রিকার করা পাহাড়সম ৫৭৭ রানের জবাবে বাংলাদেশ ব্যাট করতে নেমে ৩২ রানেই হারিয়ে বসে ৪ উইকেট। এরপর ৩৮ রানের মাথায় আলোকস্বল্পতায় খেলা বন্ধ হয়ে এবং আম্পায়ারদ্বয় দিনের খেলার সমাপ্তি ঘোষণা করেন। প্রোটিয়াদের চেয়ে এখনও বাংলাদেশ পিছিয়ে আছে ৫৩৭ রানে। মুমিনুল হক ৬ ও শান্ত ৪ রান নিয়ে অপরাজিত আছেন। তারা দুজন আগামীকাল বৃহস্পতিবার তৃতীয় দিনে ব্যাট করতে নামবেন।

বাংলাদেশের সাদমান ইসলাম ০, জাকির হাসান ২, মাহমুদুল হাসান জয় ২ ও হাসান মাহমুদ ৩ রান করে আউট হয়েছেন। ২টি উইকেট নিয়েছেন রাবাদা। ১টি করে উইকেট নিয়েছেন ড্যান পিটারসেন ও কেশভ মহারাজ।

৩২ রানেই ৪ উইকেট নেই বাংলাদেশের: সপ্তম ওভারেই চতুর্থ উইকেট হারালো বাংলাদেশ। দলীয় ৩৪ রানের মাথায় কেশভ মহারাজের বলে বোল্ড হয়ে যান হাসান মাহমুদ। ৭ বল খেলে মাত্র ৩ রান করেন তিনি। মুমিনুল হকের সঙ্গে এসে যোগ দিয়েছেন অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত।

জাকিরের পথ ধরে জয়ের বিদায় বাংলাদেশ ব্যাটিংয়ে নামলেই যেন ব্যাটিং পিচ বোলিং পিচ হয়ে যায়। সেটার প্রমাণ আরেকবার দেখলো চট্টগ্রাম টেস্ট। উইকেট হারানোর মিছিলে নাম লেখাচ্ছে বাংলাদেশের টপ অর্ডার।

এবার সাদমান–জাকিরের পর এবার আউট হলেন মাহমুদুল। ডেন প্যাটারসনের বলে ড্রাইভ খেলতে গিয়ে মার্করামের হাতে ক্যাচ দিয়েছেন এই ওপেনার। আউটের আগে করেছেন ১০ রান।

এবার জাকিরও গেলেন সাদমানের আউটের রেশ কাটতে না কাটিতেই জাকিরও ফিরে গেলেন। টানা ব্যর্থতার বৃত্তে বন্দি এই ওপেনার। পাকিস্তান ও ভারত সফরের ৪ টেস্টের ৮ ইনিংসে একবার কেবল ৪০ ছুঁতে পেরেছেন। চট্টগ্রামে প্রথম ইনিংসে করলেন ৮ বলে ২ রান।

রাবাদার লেংথ বলটা অফের বাইরে দিইয়ে বেরিয়ে যাচ্ছিলো, জাকির কি মনে করে ব্যাট চালিয়ে দিলেন। ব্যস, বল তার ব্যাট চুমো খেয়ে জমা হলো কিপারের গ্লাভসে। আপিল করলেন ভেরেইনা। আম্পায়ার আঙ্গুল তুলে দিলেন।

জাকির রিভিউ নিয়েছিলেন। কিন্তু লাভ হলো না, রিপ্লাইতে পরিস্কার দেখা গেছে বল তার ব্যাত চুমো খেয়ে গেছে। রাবাদা তুলে নিলেন তার দ্বিতীয় উইকেট।

পঞ্চম বলেই উইকেট হারালো বাংলাদেশ: ব্যাট করতে নেমে ইনিংসের পঞ্চম বলেই উইকেট হারায় বাংলাদেশ। কাগিসু রাবাদার বলে উইকেটের পেছনে কাইল ভেরেইনির তালুবন্দি হয়ে সাজঘরে ফিরেন সাদমান ইসলাম। ৬ বল খেলে কোনো রান না করেই সাজঘরে ফেরেন তিনি।

৫৭৭ রানে দ. আফ্রিকার ইনিংস ঘোষণা: বাংলাদেশের বোলারদের তুলোধুনো করে ৬ উইকেট ৫৭৭ রান তুলে ইনিংস ঘোষণা করেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। তাদের যে আটজন ব্যাটসম্যান ব্যাটিং করেছেন তাদের তিনজন পেয়েছেন সেঞ্চুরির দেখা। দুইজন করেছেন হাফ সেঞ্চুরি। টনি ডি জর্জি ১৭৭, ট্রিস্টান স্টাবস ১০৬ ও উইয়ান মুল্ডার ৮টি চার ও ৪ ছক্কায় ১০৫ রানে অপরাজিত থাকেন। এর বাইরে সেনুরান মুথুসামি ৫ চার ও ২ ছক্কায় অপরাজিত ৭০ ও ডেভিড বেডিংহ্যাম করেন ৫৯ রান।

বাংলাদেশের তাইজুল ইসলাম তুলে নেন ক্যারিয়ারের ১৪তম ফাইফার। এছাড়া নাহিদ রানা নেন অপর উইকেটটি।

মুল্ডারের ফিফটি চট্টগ্রামেও ব্যাট হাতে আলো ছড়াচ্ছেন মুল্ডার। মিরপুরে একমাত্র ইনিংসে ৫৪ রান করা মুল্ডার চট্টগ্রামে প্রথম ইনিংসেও পেয়েছেন ফিফটি। সেই সাথে মুতুসামির সঙ্গেও সপ্তম উইকেটে গড়েছেন  পঞ্চাশ ছড়ানো জুটি।

প্রথম শিকার নাহিদ রানার প্রথম সেশনে দক্ষিণ আফ্রিকার উইকেট পড়েছিল পাঁচটি। সবকটি নিয়েছিলেন নাহিদ রানা। দ্বিতীয় সেশনে এসেই প্রথম উইকেট পেলেন পেসাররা। লাঞ্চের পর সাফল্যের দেখা পেলেন নাহিদ রানা। তিনি ফেরালেন রায়ান রিকেলটনকে।

নাহিদের ব্যাক অব লেংথ ডেলিভারি পিচ করে অ্যাঙ্গেলে বেরিয়ে যায়। বলে খোঁচা দিয়ে কিপারের হাতে বেরিয়ে যাওয়ার মুখে জায়গায় দাঁড়িয়ে চালিয়ে দেন বাঁহাতি রিকেলটন। ব্যাটের কানা ছুঁয়ের বল যায় কিপারের গ্লাভসে। ১২ রানে ফেরেন রিকেলটন। দক্ষিণ আফ্রিকার রান ৬ উইকেটে ৪২৩।

নতুন ব্যাটসম্যান দলে ফেরা সেনুরান মুথুসামি।

দক্ষিণ আফ্রিকার চারশ দ্রুত তিন উইকেট হারালেও চারশ রানের ঘর পার করেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। রায়ান রিকেলটন ও ভিয়ান মুল্ডারের ব্যাটে চারশ পার করে মধ্যাহ্ন বিরতিতে গেছে প্রোটিয়ারা। মেহেদী হাসান মিরাজকে ছক্কা ও চার মেরে দলকে চারশ পার করেন রিকেলটন।

প্রথম সেশনে খেলা হয়েছে ২৯ ওভার। রান হয়েছে ১০৬। বাংলাদেশ উইকেট নিয়েছে ৩টি। দক্ষিণ আফ্রিকা ওভারপ্রতি রান তুলেছে ৩.৬৬ করে। সব মিলিয়ে প্রথম সেশনটা দুই দলেরই।

তাইজুলের ৫ উইকেট দক্ষিণ আফ্রিকার ইনিংসে অর্ধেক উইকেট পতন হয়েছে। সবগুলো উইকেট নিয়েছেন তাইজুল ইসলাম। কাইল ভেরেইনাকে বিদায় করে তুলে নিয়েছেন ফাইফার।

৩৮৬ রান তুলতে দক্ষিণ আফ্রিকা উইকেট হারিয়েছিল ২ টি। সেখান থেকে স্কোরবোর্ডে আর ৫ রান তুলতে প্রোটিয়ারা ৩ উইকেট হারিয়েছে। এই ৩ উইকেট নিয়ে পাঁচ উইকেট হলো তাইজুলের। সিরিজের প্রথম টেস্টে ৮ উইকেট নিয়েছিলেন এই স্পিনার।

আবারও তাইজুল ব্যাক টু ব্যাক উইকেট তুলে নিলেন তাইজুল ইসলাম। বেডিংহ্যামকে বিদায়ের পরের ওভারে এসেই তুলে নিলেন বাংলাদেশের পথের কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা জর্জিকে। ১৭৭ রানেই শেষ হয়েছে তার ইনিংস।

সুইপ করতে গিয়েই আউট হলেন জর্জি। তাইজুলের করা মিডল–লেগ স্টাম্প বরাবর করা বলটি প্যাডে লাগে এই ওপেনারের। আম্পায়ারও আবেদনে সাড়া দেন। ডি জর্জি রিভিউ নিয়েছিলেন। কাজে লাগেনি।

তাইজুলেই ভরসা বাংলাদেশের দলের অবস্থা দেখে মনে হবে, তাইজুল বাদে আর কোনো বোলার নাই বাংলাদেশের। দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম ইনিংসে তিন উইকেটের সবকটি নিয়েছেন তাইজুল। এবার তার শিকার বেডিংহ্যাম।

তাইজুলের প্রথম বলটিতে ছক্কা হাঁকালেন বেডিংহ্যাম। পরের বলেও ছক্কা মারতে চাইলেন। তবে এবার আর হয়নি। জোরের ওপর করা তাইজুলের বলটি মিস করেছেন বেডিংহাম, হয়েছেন বোল্ড।

৫৯ রান করে আউট হয়েছেন বেডিংহাম।

বেডিংহ্যামের ফিফটি পিচের দোষ নাকি বাংলাদেশের বোলিং লাইনআপ পানসে, এই প্রশ্ন উঠতে পারে। দক্ষিণ আফ্রিকার যিনিই ব্যাট হাতে নামছেন, ফিফটি স্পর্শ করে ফেলছেন। এবার ফিফটি পেলেন বেডিংহ্যাম।

মেহেদী হাসান মিরাজের বলে সিঙ্গেল নিয়ে ৭০ বলে ফিফটি স্পর্শ করলেন ডেভিড বেডিংহ্যাম। অষ্টম টেস্ট খেলতে নামা ব্যাটসম্যানের তৃতীয় ফিফটি এটি। সেঞ্চুরি আছে একটি।

জর্জির দেড়শ বাংলাদেশের বোলারদের কোনো সুযোগই দিচ্ছেন না জর্জি। সাবলীল খেলে এরই মধ্যে পেরিয়ে গেছেন দেড়শ রানের ঘর। ছুটছেন দুইশর দিকে। তাইজুলের বলে ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে বল সীমানা ছাড়া করে দেড়শ ছুঁয়েছেন এই ওপেনার। 

১১ চার ও ২ ছক্কায় ২৩৫ বলে দেড়শ হলো তার। পরের বলে বাউন্ডারি মারেন তিনি আরেকটি

জুটির ফিফটি সকালে আঁটসাঁট বোলিং করে বাংলাদেশ। তবে কোনো উইকেট আসেনি। এরই মধ্যে পঞ্চাশ রানের জুটি গড়ে ফেলছেন ডেভিড বেডিংহ্যাম ও টনি ডি জর্জি। জুটিতে ডি জর্জির রান ২৩, বেডিংহ্যামের ২৮।

সকালেই আম্পায়ারের ভুল দিনের দ্বিতীয় ওভারে হাসান মাহমুদের হালকা ভেতরে ঢোকা বল ঠিকমতো খেলতে পারেননি ডেভিড বেডিংহ্যাম। বল লাগে তার প্যাডে। বাংলাদেশের জোরাল আবেদনে আঙুল তুলে দেন আম্পায়ার জোয়েল উইলসন। তবে ব্যাটসম্যান রিভিউ নেন সঙ্গে সঙ্গেই।

রিভিউয়ে দেখা যায়, প্যাডে লাগার আগে ব্যাট বেশ ভালেভাবেই লাগে ব্যাটে। বেশ শব্দও হয় ব্যাটে লাগার। ব্যাটে লাগার ব্যাপার এতটাই স্পষ্ট ছিল যে, তৃতীয় আম্পায়ার এমনকি আল্ট্রা-এজ দেখার প্রয়োজনও মনে করেননি।

বাংলাদেশের লক্ষ্য কী? চট্টগ্রাম টেস্টে চালকের আসনে দক্ষিণ আফ্রিকা। প্রথম দিনে ৮১ ওভার খেলে ২ উইকেট হারিয়ে ৩০৭ রান তুলেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। সেঞ্চুরি পেয়েছেন ডি জর্জি ও স্টাবস। আজ তারা চাইবে এই সংগ্রহ বাড়িয়ে নিয়ে রান পাহাড়ের চূড়াউ উঠতে।

তাহলে বাংলাদেশের লক্ষ্য কী? দ্বিতীয় দিনের সকালটা হতে হবে বাংলাদেশের। নতুন বলে জ্বলে উঠতে হবে দুই পেসার হাসান মাহমুদ ও নাহিদ রানাকে। বলটা নতুন কারণ, গতকাল এই বলে খেলা হয়েছে মাত্র ১ ওভার। দেখা যাক, নতুন বলের সুবিধা বোলাররা নিতে পারেন কি না!