জাতীয় দলের দরজা নির্বাচকদের পক্ষ থেকে খোলা ছিল আগে থেকে। তামিম ইকবাল পুনরায় প্রবেশ করতে চান কি না সেটা নিয়েই ছিল প্রশ্ন। সেই প্রশ্নের উত্তর জানার জন্য আলোচনায় বসার কথা হচ্ছিল লম্বা সময় ধরে। অবশেষে সেই দিনটির দেখা মিলল বিপিএলের বিরতির দিনে।
বুধবার (৮ জানুয়ারি, ২০২৫) সিলেটে তামিম ইকবালের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফেরা নিয়ে আলোচনায় বসেছিলেন জাতীয় নির্বাচক প্যানেল। যেখানে খোলামেলা আলোচনা হয়েছে ঠিকই। কিন্তু চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসেনি। তবে আলোচনা ফলপ্রসূ হয়েছে।
আসন্ন চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে তামিমকে চাইছেন জাতীয় দলের নির্বাচক প্যানেল। জাতীয় দলের আগ্রহের ব্যাপারে খুশি তামিমও। তবে নিজের ফেরার সিদ্ধান্ত জানাতে আরেকটু সময় চেয়েছেন দেশের সবচেয়ে সফলতম ওপেনার।
গাজী আশরাফ হোসেন লিপু বলেছেন, ‘‘নির্বাচক প্যানেলের সঙ্গে তামিম ইকবাল আজ আলোচনায় বসেছিলেন। বৈঠকটা সুন্দরভাবে, আন্তরিকভাবে হয়েছে। বেশ কিছু ব্যাপার নিয়ে আমরা খোলামেলা আলোচনা করেছি। ক্রিকেট নিয়ে আলোচনা হয়েছে। যেটা সব সময়ই হয়। আমরা নির্বাচক হলেও সবাই প্রাক্তন ক্রিকেটার। তামিমেরে সঙ্গে বর্তমান পরিস্থিতি, বাংলাদেশের ক্রিকেট, জাতীয় ক্রিকেট, জাতীয় টিম, বিপিএল সব কিছু নিয়ে আমাদের খোলামেলা আলোচনা হয়েছে।’’
‘‘আমাদের আলোচনার বিষয়টা আমাদের কাছেই থাক। সরাসরি উত্তরটা দেব না। আমরা ব্যাপারটা (চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে তামিমের অংশগ্রহণ) আলোচনা করেছি। চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের জন্য অপেক্ষা করতে হবে। তামিমকে একটু সময় দিতে হবে।’’
১২ জানুয়ারির মধ্যে চ্যাম্পিয়নস ট্রফির জন্য দল ঘোষণা করতে হবে বিসিবিকে। তামিম নিজের সিদ্ধান্ত এর মধ্যেই জানাবেন বলে আশাবাদী গাজী আশরাফ হোসেন, ‘‘এটা তো খুব পরিস্কার বিষয়। চারদিন তো অনেক সময়। আমাদের তো হোম ওয়ার্ক করা আছে টিমটা কেমন হতে পারে। ছকটাও তো করা আছে। সেই ছকটা পূর্ণ করে বোর্ডের কাছে দেওয়া খুব বেশি সময়ের ব্যাপার না।’’
‘‘আমরা তামিমের মতো একজন খেলোয়াড়কে নিশ্চিতভাবেই সম্মান জানাই। তার সিদ্ধান্তেরও সম্মান জানাই। তিনি যদি আরেকটু সময় নেন তাহলে ফেয়ার এনাফ। বোর্ডের সঙ্গে কথা বলেছি, তাদেরও কোনো অসুবিধা নেই। আর কিছু সময় ধৈর্য্যশীল হতে হবে। অনেকদিন তো অপেক্ষা করলেন। বেশি তাড়াহুড়া করলে কিন্তু রান আউট হতে হয়।’’
প্রশ্ন উঠছে, এই আলোচনাটা আরও আগেই করা যেত কিনা কিংবা তামিমকে ফেরানোর প্রক্রিয়া আরও আগে শুরু করা যেত কিনা। দরজায় যখন চ্যাম্পিয়নস ট্রফি টোকা দিচ্ছে তখনই কেন আলোচনায় বসতে হলো?
‘‘তামিমের সঙ্গে এই ব্যাপারে আমাদের আগেই আলোচনা হতে পারত। যাই হোক, আমাদের সামনে বড় ইভেন্ট আছে। আলোচনা হয়েছে কিন্তু কোনো আলোচনাই সাথে সাথে একটা সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যায় না। এটা অনেক বড় সিদ্ধান্ত। আমরা বোর্ডের তরফ থেকে এসেছি। আবার খেলোয়াড়ের ক্ষেত্রে এই সমস্ত ইস্যু যেমন ফেরত আসা…এ সময়ে ঘনিষ্ঠজন যেমন পরিবার, বন্ধু-বান্ধব কিংবা তার প্রিয় কোচ, শুভাকাঙ্খী তাদের সঙ্গে আলাপ আলোচনার ব্যাপার থাকে। সেক্ষেত্রে একটু সময় নেওয়ার ব্যাপার এসেই যায়।’’
কিছুদিন আগে পাকিস্তানের সাবেক ক্রিকেটার শহীদ আফ্রিদির পোস্ট করা এক ভিডিওতে দেখা যায়, তামিমের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট নিয়ে আপডেট জানতে চাচ্ছিলেন আফ্রিদি। তামিম হাত নেড়ে বলেছেন, ‘‘আন্তর্জাতিক ক্রিকেট শেষ।’’ প্রধান নির্বাচকের নজরে বিষয়টি টানা হলে তিনি বলেছেন, ‘‘কোন বিষয়ে, কোন পরিস্থিতিতে…আমরা এমন একটা ইস্যু নিয়ে কথা বলছি যেটা নিয়ে তার মুখ থেকে কথা শোনাটাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এজন্য দিন দুয়েক-তিনেক অপেক্ষা করতে হবে।’’
‘‘দুই পক্ষই সময় দিয়েছি। আমরা যদি সময় চাইতাম আমাদের বিশ্বাস তামিম ইকবাল সময় দিতেন। এখন তামিম ইকবাল চেয়েছে বলে আমরা দিয়েছি। কোনো অসুবিধা নেই বলে এটা হয়েছে।’’
তামিমের ফেরা নিয়ে অধিনায়ক কিংবা বোর্ডের ভাবনা কি? জানতে চাওয়া হলে গাজী আশরাফ বলেছেন, ‘‘তামিমের সঙ্গে আলোচনার সময় অধিনায়ক ছিলেন না। এমনিতে দল গঠন নিয়ে একটা মতবিনিময় হয়। সেটা আমরা আজকেই সেরে নিয়েছি। তামিম ইকবালকে দেশের কে না চায়? আমার বিশ্বাস আপনিও চান।’’
সময় নিয়ে তামিম যে-ই সিদ্ধান্ত নিক সেটাতে সমর্থন থাকবে গাজী আশরাফের, ‘‘আমার মনে হয় তামিম কি করত চান, সেই ব্যাপারে আগের থেকে ভেবে রেখেছে। এটা আমার বিশ্বাস। এতো বড় ক্রিকেটার…তারপরও কিছু ক্ষেত্রে সংশয়ের সৃষ্টি হয়। তখন পরিবারের সিদ্ধান্ত নেওয়া লাগে। এখানেও তেমন কিছুই হচ্ছে। আমি চাই ঘোষণাটা তামিম নিজে এসে দিক। সেটা সে আসুক বা না-ই আসুক।’’
২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরের পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলা হয়নি তামিমের। এর আগে অবসর নিয়ে ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে মাঠে ফেরার ঘোষণাও দিয়েছিলেন। এরপর ঘরোয়া ক্রিকেট ছিল একমাত্র খেলার জায়গা। গত বছর ঢাকা লিগ খেলেছিলেন এপ্রিলে। এরপর লম্বা সময় পর ডিসেম্বরে এনসিএল টি-টোয়েন্টি দিয়ে মাঠে ফেরেন। এখন খেলছেন বিপিএল। ৩৫ পেরিয়ে যাওয়া তামিম যে অবস্থাতাতেই থাকুক না কেন, তার উপর পূর্ণ আস্থা প্রধান নির্বাচকের, ‘‘আপনার কাছে কি মনে হচ্ছে পর্যাপ্ত ফিট নন? সে এনসিএল খেলছে। বিপিএল খেলছে। তার যোগ্যতা নিয়ে কোনো সংশয় নেই। তার ফেরাটার জন্য আমরা সবাই মুখিয়ে ছিলাম। সে ফিরতে চান কিনা। যেকোনো সময়ে সে মোস্ট ওয়েলকাম আমাদের দিক থেকে।’’