নারীরা কতটা সুরক্ষিত?
হুমায়রা ইসলাম, কাজ করেন একটি টেলিসেলস মাকেটিং প্রতিষ্ঠানে। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কাজ করে যখন বাসায় ফিরেন তখন তাকে প্রায়ই বিব্রতকর পরিস্তিতিতে পড়তে হয়।
কখনো গণপরিবহনে হয়রানি বা কখনো পোশাক নিয়ে মানুষের বাজে মন্তব্য, এমনকি কর্মস্থল ও বাসায় তাকে শুনতে হয় নানা কথা।
এসবে এখন অভ্যস্ত তিনি। বড় কোনো দুর্ঘটনায় পড়েন কী না তা ভেবে ভয় পান। কারণ সমাজে নিজেকে সুরক্ষিত ভাবেন না তিনি।
হুমায়রার মতো স্বাধীন ও স্বনির্ভর হতে বিভিন্ন ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের কাজ করেন ইফতিজাহ জান্নাত। কম্পিউটার সায়েন্সে ডিপ্লোমা করার পাশাপাশি ইভেন্টে কাজ করে হাত খরচের টাকা জোগাড় করেন তিনি। তবে কাজে সুরক্ষা নেই বলে অভিযোগ তার।
ইফতিজাহ জান্নাত বলেন, ‘কাজে গেলে অনেকে প্রেম করার জন্য কন্টাক নম্বর চায়, সামনে অযথা দাঁড়িয়ে থাকে। ব্যক্তিগত বিষয় জানার জন্য প্রশ্ন করে। কেউ কেউ আবার বাজে প্রস্তাব দেয়। এসব কারণে উৎসাহ থাকলেও অনেক সময় কাজ করি না।’
বিশ্লেষকরা বলছেন, পুরুষতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গির কারণে সমাজে নারী ক্ষমতায়ন তৈরি হয়নি। ফলে নারীদের স্বাধীন চলাফেরা অনেকে মেনে নিতে পারেন না। কারণ অনেকে মনে করে নারীরা ঘরে থাকবে। ঘরের কাজ করবে।
কোনো কোনো ক্ষেত্রে নারীদের সুরক্ষার ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অবহেলা, ধর্ষণের মতো ঘটনার দীর্ঘসূত্রিতার কারণে নারীরা সমাজে সুরক্ষিত নয়। পাশাপাশি হয়রানির শিকার হয়ে সামাজিক সম্মানহানির কথা চিন্তা করে আইনের আশ্রয় না নেওয়ার ফলেও নারীদের সুরক্ষা নিশ্চিত হচ্ছে না।
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের এক পরিসংখ্যান বলছে, চলতি বছরের প্রথম দুই মাসে ৬৬৩ জন নির্যতনের শিকার হয়েছেন। এরমধ্যে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ২৩০ জন, গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৪৪ জন, ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে ২৪ জনকে, ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে ২৪ জনকে, শ্লীলতাহানী করা হয়েছে ১৪ জনকে, যৌন নির্যাতন করা হয়েছে ২০ জনকে, ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে নয়জনকে এবং ধর্ষণের কারণে একজন আত্মহত্যা করেছেন।
বছরের জানুয়ারি মাসে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ৩২৬ জন, ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ১১৬ জন, গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন ২০ জন, ধর্ষণচেষ্টার শিকার হয়েছেন ২৪ জন, শ্লীলতাহানীর শিকার হয়েছেন আট জন, যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন জ১০ জন।
ফেব্রুয়ারি মাসে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ৩৩৭ জন, ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৭৪ শিশুসহ ১১৪ জন, গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন ২৪ জন, শ্লীলতাহানীর শিকার হয়েছেন ছয়জন, যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ১০ জন, ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে নয় জনকে এবং ধর্ষণের পর আত্মহত্যা করেছে একজন।
মহিলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি সালমা আলী বলেন, ‘নারীদের সুরক্ষা কোথাও নেই। পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নারীরা সব সময় নির্যতিত হয়েছে এখনো হচ্ছে। এ জায়গা থেকে বের হতে হবে। নারীদের সুরক্ষার জন্য আইন আছে। কিন্তু এর প্রয়োগ নেই। কর্মক্ষেত্রে নারীদের অনেক প্রতিকূলতার সঙ্গে লড়াই করে টিকে থাকতে হয়।’
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি আয়শা খানম বলেন, ‘আমাদের নারীর ক্ষমতায়ন এখনো নিশ্চিত নয়। মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত নয়। বাক স্বাধীনতা নেই। নারী-পুরুষ সমতা নেই। সেখানে সুরক্ষা হবে কীভাবে?
নারী ও পুরুষের সমতার বিষয়টি নিশ্চিত হলে নারীদের সুরক্ষা নিশ্চিত হবে বলে মনে করেন তিনি। পাশাপাশি এ বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধিতে সরকারকে আরো কাজ করার আহ্বান জানান তিনি।
** ‘যে হাতে রিকশার হ্যান্ডেল ধরেছি, সেই হাতে প্রাইভেট কার চালাব’
** ‘নারীর প্রতি সহিসংতা বন্ধে কাজ করছে সরকার’
** ‘প্রজন্ম হোক সমতার, সকল নারীর অধিকার’
ঢাকা/নূর/বুলাকী
রাইজিংবিডি.কম
আরো পড়ুন