ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার হত্যার অন্যতম আসামি চরমপন্থী নেতা শিমুল ভূঁইয়া। তিনি নিজের পরিচয় লুকিয়ে ঢাকার সাভার এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস করে আসছিলেন। ধরা পড়ার সময় পুলিশের কাছে তিনি নিজেকে সৈয়দ আমানুল্লাহ নামে পরিচয় দেন।
এই পরিচয়েই সাভারের শ্যামলাপুর এলাকার লুটেরচরে প্রায় চার বছর ধরে বসবাস করছিলেন শিমুল। বাড়িওয়ালা মো. নাজিম উদ্দিনের ভাষ্যে, পাঁচতলা ওই ভবনের তৃতীয় তলায় ফ্ল্যাট ভাড়া নেন শিমুল। সেসময় তিনি যে পাসপোর্টের ফটোকপি জমা দিয়েছিলেন, তাতে তার নাম ছিল সৈয়দ আমানুল্লাহ।
সাভারে ওই ভবনটিতে গিয়ে জানা যায়, মাসিক ১৫ হাজার টাকা ভাড়ায় তৃতীয় তলার ফ্ল্যাটে উঠেছিলেন শিমুল ভূঁইয়া। বাসা ভাড়া নেওয়ার জন্য তিনি আমানুল্লাহ নামে তৈরি করা পাসপোর্টের ফটোকপি জমা দিয়েছিলেন। ভবনের মালিক, নিরাপত্তা রক্ষী ও আশপাশের মানুষরা তাকে এতো বছর স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে দেখেছেন। সম্প্রতি সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার হত্যাকাণ্ডে তার নাম আসায় বিস্মিত তারা।
আরও পড়ুন: ‘ভূঁইয়া ম্যানশন’ এখন নিরব, ভয়ে মুখ খুলছেন না কেউ
শিমুল ভূঁইয়ার ভাড়া করা ভবনের আশপাশের লোকজন বলেন, স্থানীয়দের সঙ্গে তেমন কথা বলতেন না তিনি (শিমুল ভূঁইয়া)। ভবন মালিকসহ অন্যদের সঙ্গেও কথা বলতেন খুব অল্প।
ভবনটির কেয়ারটেকার হিসেবে দায়িত্ব পালন করা সোবহান মিয়াকে শিমুল ভূঁইয়ার ছবি দেখালে তিনি বলেন, ‘তার নাম আমানুল্লাহ। তিনি এই ভবনের তৃতীয় তলায় থাকতেন। ফ্ল্যাট থেকে খুব একটা নামতেন না। এক-দুইবার নেমে অল্প সময় বাইরে থেকে আবারও ফ্ল্যাটে ফেরত যেতেন। কথাও বলতেন অল্প।’
ভবনের মালিক মো. নাজিম উদ্দিন জানান, বাসা ভাড়া নেওয়ার সময় তার জাতীয় পরিচয়পত্র ও ছবি চাওয়া হয়। তখন তিনি জানান, তার জাতীয় পরিচয়পত্র নেই। তবে, পাসপোর্ট আছে। তিনি সেটির ফটোকপি ও ছবি তাকে (ভবন মালিক) দেন। ওই পাসপোর্টে তার নাম ছিল সৈয়দ আমানুল্লাহ। তিনি সে সময় নিজেকে রেন্ট এ-কার ও যৌথভাবে মোটরসাইকেলের শো রুমের ব্যবসায়ী বলে জানান। শিমুল ভূঁইয়া বাসায় স্ত্রী, এক মেয়ে ও কাজের মেয়েকে নিয়ে থাকবেন বলেও জানিয়েছিলেন।
আরও পড়ুন: যেভাবে অপরাধজগতে উত্থান শিমুল ভূঁইয়ার
নাজিম উদ্দিন বলেন, ‘ওই ব্যক্তি কথা বলতেন খুবই অল্প। বাসা থেকেও খুব একটা বের হতেন না। বের হলেও আশপাশের শিশুদের সঙ্গে মিশতেন। আবার বাসায় ফিরতেন।’
তার পরিচয় ও সংসদ সদস্য হত্যায় জড়িতের কথা শুনে বিস্ময় প্রকাশ করে তিনি আরও বলেন, ‘তাকে দেখে কোনোভাবেই মনে হয়নি, তিনি এমন ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকতে পারেন। তার গতিবিধিতে সন্দেহ করার মতো কিছু ছিল না। তার স্ত্রী মাঝে মধ্যে বাসায় আসলেও নিয়মিত থাকতেন না। আর লোকজন আসতো না। বাসা ভাড়াও প্রতি মাসের ৫ তারিখের মধ্যে দিয়ে দিতেন।’
নাজিম উদ্দিন বলেন, ‘মে মাসের ১৬-১৭ তারিখ রাত সাড়ে ১২টার দিকে সাদা পোশাকে ডিবির কয়েকজন বাসার কাছে আসেন। আমার ছেলে তাদের সঙ্গে কথা বলেন। পরিচয় নিশ্চিত হয়ে তাদের বাসায় ঢুকতে দেন। এর মধ্যে ৫ জনের মতো সরাসরি ওই ফ্ল্যাটে যান। সেখান থেকে তারা তাকে (শিমুল ভূঁইয়া) আটক করেন।’
প্রসঙ্গত, আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার গত ১২ মে চুয়াডাঙ্গার দর্শনা সীমান্ত দিয়ে ভারতের কলকাতা যান। আট দিন নিখোঁজ থাকার পর ২২ মে তার খুন হওয়ার বিষয়টি দুই দেশের পুলিশ নিশ্চিত করে। কলকাতার নিউ টাউনে আক্তারুজ্জামান শাহীনের ভাড়া করা ফ্ল্যাটে আনোয়ারুলকে খুন করা হয়। সেই ঘটনায় আমানুল্লাহ নামধারী শিমুল ভূঁইয়াকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ওই ঘটনায় আনোয়ারুলের মরদেহ বা মরদেহের টুকরোর খোঁজে কলকাতার বিভিন্ন জায়গায় এখনও অভিযান চালানো হচ্ছে।