পঞ্চগড়ে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের (কাদিয়ানী) বার্ষিক সালানা জলসাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ, ভাঙচুর, লুটপাট এবং অগ্নিসংযোগের ঘটনায় এখন পর্যন্ত মোট ১৩টি মামলা করেছে পুলিশ। এসব মামলায় ১৩৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
পঞ্চগড়ের বোদা ও সদর থানায় করা মামলাগুলোতে নাম উল্লেখসহ নাম না জানা আসামি করা হয়েছে ১০ হাজারের বেশি মানুষকে।
বুধবার (৮ মার্চ) সকালে পঞ্চগড়ের পুলিশ সুপার এস. এম সিরাজুল হুদা এতথ্য নিশ্চিত করেন।
এদিকে, উত্তপ্ত পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও এখন জেলা জুড়ে বিরাজ করছে গ্রেপ্তার আতঙ্ক। গ্রেপ্তারের সংখ্যাও বাড়ছে পাল্লা দিয়ে। পুলিশের পাশাপাশি গ্রেপ্তার অভিযান চালচ্ছে র্যাব ও বিজিবি।
গত শুক্রবার (৩ মার্চ) আহমদিয়া সম্প্রদায়ের (কাদিয়ানি) বার্ষিক সালানা জলসাকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত হয় পঞ্চগড়। ওই দিন জুমার নামাজের পর আহমদিয়াদের তিন দিনব্যাপী জলসা বন্ধের তাদের দাবিতে জেলা শহরের বিভিন্ন মসজিদ থেকে খণ্ড খণ্ড বিক্ষোভ মিছিল বের করে মুসল্লিরা। সম্মিলিত খতমে নবুওয়ত সংরক্ষণ পরিষদের ডাকে পরে বিক্ষোভ মিছিলটি কেন্দ্রীয় মসজিদের সামনে থেকে বড় পরিসরে চৌড়ঙ্গী মোড়ের দিকে আসতে থাকে। এসময় পুলিশ তাদের বাধা দিলে শুরু হয় সংঘর্ষ। পুলিশের ওপর হামলা করে ইট পাটকেল ছুড়তে থাকে মুসল্লিরা। সেসময় পুলিশও অসংখ্য টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট ছোড়ে।
সংঘর্ষ চলাকালে বিক্ষোভকারীদের কয়েকটি অংশ জেলা শহরের বিভিন্ন এলাকায় অবস্থান নিয়ে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। তারা পুলিশ ও বিজিবির গাড়ি ভাঙচুর, ট্রাফিক পুলিশের অফিসে অগ্নিসংযোগ করে। এছাড়া আরেকটি অংশ পঞ্চগড় বাজারে আহমদিয়াদের চারটি দোকানের মালামাল বের করে আগুনে পুড়িয়ে দেয়। এছাড়া তাদের বেশকিছু বাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনাও ঘটে। এসব ঘটনায় কাদিয়ানী সম্প্রদায়ের একজন এবং মুসল্লিদের মধ্যে একজন নিহত হন। পরে রাত ৯টার দিকে জলসা স্থগিত ঘোষণা করলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।
এদিকে, গত শনিবার সন্ধার পর আবারও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে পঞ্চগড় শহর। ‘আহমদিয়া সম্প্রদায়ের মানুষেরা দুই জনকে গলা কেটে হত্যা করেছে’- এমন গুজবে বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন সাধারণ মানুষ। হাতে লাঠিসোঁটা নিয়ে তারা দুইভাগ হয়ে আহমদনগর ও তুলারডাঙ্গা এলাকার দিকে ছুটতে থাকেন। এ সময় পঞ্চগড় বাজারের কদমতলা এলাকার ওয়াকার শোরুম নামে একটি জুতার দোকানের সাটার ভেঙে মালামাল লুটপাট করে নিয়ে যায় একদল মানুষ। এর মধ্যে রাত সাড়ে ১০টার দিকে পঞ্চগড় পৌরসভার ট্রাক টার্মিনাল এলাকায় একটি মাইক্রোবাস পুড়িয়ে দেয় জনতা।
পুলিশ সুপার এস. এম সিরাজুল হুদা বলেন, আহমদিয়া সম্প্রদায়ের জলসাকে কেন্দ্র করে ঘটনায় ১৩টি মামলা হয়েছে। বুধবার পর্যন্ত মোট ১৩৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আসামি গ্রেপ্তারের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা হচ্ছে। ভিডিও ফুটেজ, গোয়েন্দা তথ্য, বিভিন্ন স্টিল ছবি যাচাই-বাছাই করে আসামিদের গ্রেপ্তার চলছে।