‘আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি না এখন এ মুহূর্তে কেউ প্রস্তুত জাতীয় দলের প্রধান কোচ হওয়ার জন্য। আমি সাথে এটাও বলেছি- বাংলাদেশে তিন চারজন আছে যারা সহকারী কোচ হওয়ার জন্য প্রস্তুত।’ - স্থানীয় কোচ নিয়ে জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক তামিম ইকবালের এই মন্তব্য এখন টক অব দ্য টাউন।
জাতীয় দলে বিদেশি কোচদের পরিবর্তে স্থানীয় কোচ নিয়োগে যখন দাবি তোলা হচ্ছে তখন তামিমের এই মন্তব্য রীতিমত আলোড়ন তৈরি করেছে। পক্ষে-বিপক্ষেও মত দিচ্ছেন কেউ কেউ। তামিমের এই মন্তব্যে পুরোপুরি একমত, স্থানীয় কোচ মোহাম্মদ সালাউদ্দিন। তামিম এ-ও বলেছেন, ‘আমার কাছে মনে হয় দুই তিনজন বাংলাদেশে আছেন যারা সহকারী কোচ হওয়ার জন্য খুবই যোগ্য। আমি নিশ্চিত তারা এক দুই বছর, তিন বছর কাজ করে তাহলে জাতীয় দলের প্রধান কোচ হতে যোগ্য হয়ে উঠবে।’
সালাউদ্দিনও মনে করেন, সহকারী কোচ হিসেবে স্থানীয় কোচ নিয়োগ দিয়ে তাদের তৈরি করতে হবে। বাংলাদেশ-ভারত দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টি চলাকালীন অফিসিয়াল ব্রডকাস্টারকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সালাউদ্দিন বলেছেন, ‘আমি মনে করি তামিম একেবারে সঠিক কথা বলেছে। আমাদের যারা জাতীয় দলে প্রথমেই ঢুকে তাকে নিয়ে আমরা কখনো ভাবি যে সে একেবারে প্রস্তুত হয়ে এসেছে।’
‘আমি মনে করি অনেক খেলোয়াড় আছে যারা আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলতে খেলতে হয়তো ৫-৭ বছর লেগে গেছে, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রতিষ্ঠিত হতে। সেই ৫-৭ বছর যদি ক্রিকেটারদের লাগে তাহলে কোচদেরও তো সেই সময়টা লাগবে। আপনি অনেক ছেলেকেই ৫-৭ বছর ধরে টানছেন। কোনো না কোনো সময় সে রান করবে। এখন কোচও তো কোনো না কোনো সময় গিয়ে ভালো হতে পারে। তাকে সেই সময়টা দিতে হবে।’- যোগ করেন সালাউদ্দিন।
কোচদের ক্রিকেটারদের সমমানের মূল্যায়নের পাশাপাশি ভালোমানের পারিশ্রমিক দেওয়ার কথা বলেছেন সালাউদ্দিন, ‘বিপিএল নিয়ে আমরা বেশি আগ্রহ দেখাই। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট নিয়ে কি আগ্রহ দেখাই? আমারও প্রশ্ন তাদের কাছে যে, কয়টা জাতীয় দলের বর্তমান ক্রিকেটার প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট খেলতে যায়। মন থেকে যায়? নিশ্চয়ই কোনো কারণ আছে। কেউ তো মন থেকে যায় না। নিশ্চয়ই এর পেছনে কারণ আছে।’
‘অর্থনৈতিক একটা ব্যাপার আছে। আগে এক বছর একজন সহকারী কোচ কাজ করলে ৩০,০০০ টাকা পেত। আপনি আমাকে বলেন যে, একটা লোক একটা জায়গায় চাকরি করে সেখানে যদি ৫০,০০০ টাকা পায়, এখানে আসলে ৩০,০০০ টাকা পাবে। একজন কোচ চারদিনের প্রতিযোগিতায় কেন কাজ করবে। দেড় মাস কাজ করে ৩০,০০০ টাকা পাবে। এখন মনে হয় সেটা ১ লাখ হয়েছে।’ ‘আমার যুক্তিটা হচ্ছে, আমি দুই মাস আড়াই মাস প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে কাজ করতে যাবো। আমার বেনিফিট না হয় এমন জায়গায় কেন যাবো। আমার যদি কোনো লাভ না হয়। ভাবলাম যে আমি দেশের ক্রিকেটে সার্ভিস দেব। কিন্তু পেট তো চালাতে হবে। একজন খেলোয়াড় একটা প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেললে পায় ৮০ কিংবা ৬০ হাজার টাকা। আর একজন কোচ পুরো সিজন কাজ করে ১ লাখ টাকার মতো পায়। একজন খেলোয়াড় একটা ম্যাচ খেলে ১ লাখ টাকার কাছাকাছি পেল আর একজন কোচ দুই মাস কাজ করে ১ লাখ টাকা পায়।’
কোচদের তৈরি করার জন্য বয়সভিত্তিক দলগুলোতে কাজের সুযোগ করে দিতে বললেন সালাউদ্দিন, ‘আপনি কোনো কিছু বাইরে থেকে বসে বিচার করতে পারেন না। যারা জাতীয় দলে খেলে তারা বিদেশি কোচের অধীনে খেলে। স্থানীয় কোচরা কিভাবে চলে সেটা কি দেখেছেন কখনো। তাকে আপনি কোথায় দায়িত্ব দিয়েছেন? যুব ক্রিকেটে, এ দলে কিংবা অন্য কোথাও।’
‘সে কিভাবে দলটা চালাচ্ছে দেখেছেন। কিংবা তার সেই ক্যাপাবিলিটি আছে কিনা। সেটা একটা বড় ফ্যাক্টর। তাকে তো গড়ে তুলতে হবে। যারা জাতীয় দলে আসছে তাদেরকে “এ” টিমে, যুব টিমে কয়েকবছর খেলিয়েছেন। তাকে সব কিছু করে জাতীয় দলে নিয়েছেন। আপনি কি কখনো আপনার কোচকে বানিয়েছেন এভাবে। কোচকে তো কখনো বানাননি। কোচকেও এভাবেই প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।’- যোগ করেন সালাউদ্দিন।