সারা বাংলা

পাগলা মসজিদের দানবাক্সে মিললো সর্বোচ্চ ৮ কোটি ২১ লাখ টাকা

কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদের ১১টি দানবাক্সে এবার পাওয়া গেছে ৮ কোটি ২১ লাখ ৩৪ হাজার ৩০৪ টাকা। এটি এই মসজিদের ইতিহাসে পাওয়া সর্বোচ্চ পরিমাণ দানের টাকা। 

শনিবার (৩০ নভেম্বর) সন্ধ্যা ৭টার দিকে আনুষ্ঠানিকভাবে এ তথ্য জানান কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক ও পাগলা মসজিদ কমিটির সভাপতি ফৌজিয়া খান। 

আরো পড়ুন: পাগলা মসজিদের দানবাক্সে মিলল ২৯ বস্তা টাকা, চলছে গণনা

এর আগে আজ সকাল সাড়ে ৭টার দিকে মসজিদের ১১টি দানবাক্স পর্যায়ক্রমে খোলা হয়। সেখানে পাওয়া যায় মোট ২৯ বস্তা টাকা। দেশি টাকার পাশাপাশি সেখানে ছিল স্বর্ণালঙ্কার ও বৈদেশিক মুদ্রাও। পরে জেলা প্রশাসনের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে কড়া নিরাপত্তায় বস্তাগুলো মসজিদের দোতলায় নিয়ে যাওয়া হয়। 

গত ১৭ আগস্ট আরেকবার খোলা হয়েছিল দানবাক্সগুলো। তখন দানবাক্সগুলোতে ৭ কোটি ২২ লাখ ১৩ হাজার ৪৬ টাকা পাওয়া যায়। এর আগে, গত ২০ এপ্রিল দানবাক্সগুলো খুলে পাওয়া যায় ৭ কোটি ৭৮ লাখ ৬৭ হাজার ৫৩৭ টাকা। তারও আগে গত বছরের ৯ ডিসেম্বর পাওয়া যায় ৬ কোটি ৩২ লাখ ৫১ হাজার ৪২৩ টাকা। এবার দানের পরিমাণ অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। টাকা গুণতে দুটি মদরাসার আড়াইশো শিক্ষার্থী, ৭০ ব্যাংক কর্মকর্তা ও মসজিদ কমিটি মিলিয়ে সাড়ে চারশ লোকের ১১ ঘণ্টা সময় লেগেছে। 

দানবাক্স খোলার সময় কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক ও পাগলা মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতি ফৌজিয়া খান ও পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাছান চৌধুরীর উপস্থিত ছিলেন। এসময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা সার্বিক নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করেন। টাকা গণনা শেষ হওয়া পর্যন্ত মসজিদ ঘিরে কঠোর নিরাপত্তা বলয় বাজায় ছিল। অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) মিজাব রহমতের নেতৃত্বে কয়েকজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট টাকা গণনার কাজ তদারকি করেন। 

রূপালী ব্যাংকের সহকারী মহাব্যবস্থাপক (এজিএম) রফিকুল ইসলাম বলেন, “এবার মসজিদের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি পারিমাণ টাকা পাওয়া গেছে। দেশি টাকা ছাড়াও বৈদেশিক মুদ্রা ও সোনা-রূপার অলঙ্কারও উল্লেখযোগ্য পরিমাণে পাওয়া গেছে। দেশি টাকা আমাদের ব্যাংকে জমা হবে। অন্যসব কিছু কমিটির জিম্মায় থাকবে।”

এলাকাবাসী জানান, মুসলিমসহ বিভিন্ন সম্প্রদায়ের লোকজন এ মসজিদে দান করেন। এখানে দান করলে মনোবাসনা পূরণ হয় এমন বিশ্বাস থেকে তারা ছুটে আসেন পাগলা মসজিদে। তারা টাকার সঙ্গে সোনা-রুপার অলঙ্কারসহ বৈদেশিক মুদ্রাও দান করে থাকেন। প্রতিদিন বিপুলসংখ্যক গবাদিপশু, হাঁস-মুরগি, ফল, মোমবাতি ও ধর্মীয় বই দান করেন লোকজন।

জানা গেছে, মসজিদের দানের টাকা ব্যাংকে গচ্ছিত থাকে। ওই টাকার লভ্যাংশ থেকে ক্যানসারসহ জটিল রোগে আক্রান্তদের আর্থিকভাবে অনুদান দিয়ে থাকে মসজিদ কমিটি। 

মসজিদের সভাপতি ও জেলা প্রশাসক ফৌজিয়া খান বলেন, “দানের টাকায় মসজিদের নিয়মিত খরচ চলে। বাকি টাকা ব্যাংকে জমানো হচ্ছে। এ টাকা দিয়ে মসজিদের বড় উন্নয়ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হবে। মসজিদ ঘিরে এখানে ছয় তলাবিশিষ্ট একটি ইসলামি কমপ্লেক্স নির্মিত হবে। যেখানে একসঙ্গে ৫০ হাজার মুসল্লি একসঙ্গে নামাজ পড়তে পারবে। এরমধ্যে পাঁচ হাজার নারীর জন্য আলাদাভাবে নামাজের ব্যবস্থা থাকবে।” 

তিনি আরো বলেন, “ইসলামি কমপ্লেক্সে সমৃদ্ধ লাইব্রেরিসহ থাকবে আরো বিভিন্ন আয়োজন। এ জন্য পরামর্শক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তারা যাচাই-বাছাই করে ডিজাইন ও নকশা চূড়ান্ত করে দিলেই দরপত্র আহ্বানের মাধ্যমে কাজ শুরু হবে। এতে প্রাথমিক খরচ ধরা হয়েছে ১১৫ কোটি টাকা।”