সারা বাংলা

কুয়েটে সংঘর্ষ নিয়ে যা বলছে ছাত্রদল

কুয়েটে সংঘর্ষ নিয়ে যা বলছে ছাত্রদল

খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনার বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছে ছাত্রদল। সেখানে হামলার ঘটনায় ছাত্রদল জড়িত নয় বলে দাবি করা হয়েছে। একই সঙ্গে যারা জড়িত তাদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানান সংগঠনটির নেতারা। 

বুধবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে খুলনা প্রেস ক্লাবের লিয়াকত আলী মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে কুয়েট ছাত্রদল। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে দেন ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সিনিয়র সহ-সভাপতি আবু আফসান মো. ইয়াহিয়া।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, কুয়েটে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে একটি মিছিল থেকে অনাকাঙ্খিত ঘটনার সূত্রপাত হয়। মিছিল থেকে রাহুল জাবেদ (২০২১-২২ সেশন), ইফাজ (২০২২-২৩ সেশন) ও ইউসুফ (২০২২-২৩ সেশন) নামে তিন ছাত্রদল সমর্থকের ওপর অতর্কিত হামলা করা হয়। সেই মিছিল থেকেই ধারণকৃত একটি ভিডিওতে দেখা যায়, যখন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা ক্লাস শেষে অতি সাধারণভাবেই মিছিলটির পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন, তখন কতিপয় মিছিলকারী তাদের দিকে তেড়ে গিয়ে হামলার সূচনা করে। 

ভুক্তভোগীদের বয়ান অনুযায়ী, তাদেরকে ধাওয়া দিয়ে ও মারধর করে কুয়েট গেটের বাইরে নিয়ে যাওয়া হয়। গেটের কাছে একটি দোকানে আশ্রয় নিলে সেই দোকানদারকেও হেনস্তা করা হয়। যার জবাবে, সেই দোকানমালিকের পরিচিত কিছু স্থানীয় লোকজন সশস্ত্র হামলা চালায় মিছিলকারীদের ওপর। দফায় দফায় ধাওয়া-পাল্টা-ধাওয়া চলে, কুয়েটের গেট হয়ে ওঠে রণক্ষেত্র। এ ঘটনায় জড়িতদের কেউই ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নন। ছাত্রদলের ইন্ধনে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালানোর কোনো কারণও নেই বলে জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে।

ছাত্রদলের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শ্যামল মালুম বলেন, “কুয়েটে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কমিটি রয়েছে। এটি সম্পূর্ণ একটি রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠন। তারা রাজনৈতিক দল গঠন করে আগামীতে নির্বাচনে অংশগ্রহণের প্রস্তুতি নিচ্ছে। তারা কুয়েটে নিজেদের কার্যক্রম চালু রেখে কোন মুখে দাবি করে, তারা এখানে ছাত্র রাজনীতি চালু করতে দেবে না। কুয়েটের ৭৪ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্যাডে হাসনাত আব্দুল্লাহ এবং আরিফ সোহেল স্বাক্ষরিত একটি কমিটি প্রকাশিত হয়েছে। সেই কমিটি স্পষ্ট প্রকাশ পায় যে, সেখানে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালু আছে।”

তিনি আরো বলেন, “মঙ্গলবারের (১৮ ফেব্রুয়ারির) ঘটনার একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। সেই ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে- ছাত্রদলের ছেলেরা হেটে যাচ্ছে, অপরদিকে ওরা মিছিল নিয়ে আসছে। সেখানে প্রতিষ্ঠানের (কুয়েট) বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক ওমর ফারুক দেখিয়ে দিচ্ছেন, ছাত্রদলের ছেলেরা যাচ্ছে এবং তার উস্কানীতে ছাত্রদলের ছেলেদের তারা ধরেছে এবং পরবর্তী প্রেক্ষাপট সৃষ্টি হয়েছে। গতকাল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেছেন, ছাত্রলীগের মতো যারা আচরণ করবে, তাদের পরিণতিও ছাত্রলীগের মতো হবে। আমরা জাতির সামনে প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছি, গতকালকের এই ঘটনার জন্য সম্পূর্ণভাবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দায়ী এবং তাদের ভূমিকা ছিল ছাত্রলীগের মতোই।”

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সিনিয়র সহ-সভাপতি আবু আফসান মো. ইয়াহিয়া বলেন, “মঙ্গলবার বিকেলে কুয়েটে চরম অনাকাঙ্ক্ষিত ও অনভিপ্রেত ঘটনা ঘটেছে। পাল্টাপাল্টি হামলায় মারাত্মকভাবে হতাহত হয়েছেন শতাধিক শিক্ষার্থী ও স্থানীয় বাসিন্দ।” 

তিনি আরো বলেন, “আমরা বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের পক্ষ থেকে এখানে সরেজমিনে তদন্তের দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়ে এসেছি। আমরা আহতদের সুস্থতা কামনা করছি। একই সঙ্গে সহিংসতার ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। ন্যাক্কারজনক হামলাতে ও এসবের উস্কানিতে জড়িত যেই হোক না কেন, সুষ্ঠু তদন্ত করে তাদের সবাইকে বিচারের আওতায় এনে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি জানাচ্ছি।”

আবু আফসান মো. ইয়াহিয়া বলেন, “এই ঘটনার প্রেক্ষিতে অনলাইনে ও অফলাইনে নিরন্তর অপপ্রচারের মাধ্যমে সত্য ঘটনাকে চাপা দিয়ে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের নামে যে মিথ্যা অপবাদ চারদিকে ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে, তার জবাবে বাস্তব প্রেক্ষাপটে আমাদের সংগঠনের নৈতিক ও রাজনৈতিক অবস্থান ব্যাখ্যা করাটি অতি জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে। যদিও আমরা এখানে তদন্তের দায়ভার নিয়ে এসেছি এবং মোটাদাগে একটি প্রতিবেদন আমরা বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, কেন্দ্রীয় সংসদের নিকট জমা দেব। তারপরেও প্রশাসন কর্তৃক আরো পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্তের পর বিচারিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়া পর্যন্ত এইসব ঘটনার পুরো সত্য-মিথ্যা নির্ধারণ সম্ভব হবে না।”

“সহিংসতায় জড়িত কতিপয় স্থানীয় দলীয় কর্মীকে ইতোমধ্যেই বহিষ্কার করা হয়েছে বলে আমরা দেখেছি। তবে তাদের কেউই ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নন। ছাত্রদলের ইন্ধনে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালানোর কোনো কারণও তাদের নেই” যোগ করেন তিনি। 

তিনি দাবি করেন, “সহিংসতায় ছাত্রদলের উক্ত সমর্থকরা কেবলমাত্র ভুক্তভোগী হিসেবে জড়িত ছিলেন বলেই এখন পর্যন্ত জানা গেছে। তাদের তিনজনই কুয়েটের সম্মান কোর্সের নিয়মিত শিক্ষার্থী। যেহেতু, কুয়েটে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কোনো কমিটি গঠিত হয়নি এবং এখন পর্যন্ত কুয়েট ক্যাম্পাসে সদস্য ফরম পূরণ কার্যক্রমও শুরু হয়নি, সেহেতু তারা তিনজন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের নিবন্ধিত কর্মীও নন। তাই তাদেরকে কেন্দ্র করে ঘটা কোনো ঘটনাকে “ছাত্রদলের হামলা” শীর্ষক ঘটনা হিসেবে প্রচার করা হবে মিথ্যা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত একটি কাজ।”

ছাত্রদলের এই নেতা বলেন, “ফরম পূরণ কার্যক্রম শুরু না হলেও বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের আদর্শে উজ্জ্বীবিত শিক্ষার্থী হিসেবে পরিচিত বলে তারাসহ আরও কিছু শিক্ষার্থীকে হেনস্তা করার উদ্দেশ্যে চিহ্নিত ও তালিকাভুক্ত করেন ‘সাধারণ শিক্ষার্থী’ ব্যানারের পেছনে লুকানো বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও আন্ডারগ্রাউন্ড রাজনীতির ধারক–বাহক ইসলামী ছাত্রশিবিরের গুপ্ত কর্মীরা ও ক্যাম্পাসে রয়ে যাওয়া ফ্যাসিবাদী নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের কর্মীরা। ছাত্রদল কুয়েট ক্যাম্পাসে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো রাজনৈতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন না করলেও এসব গুপ্ত ষড়যন্ত্রকারীদের ইন্ধনে সাধারণ শিক্ষার্থী পরিচয়ে ওই ‘মব’ মিছিলটির আগের ছাত্রদলের রাজনীতি নিষিদ্ধ চেয়ে ক্যাম্পাসে বিশাল ব্যানার টানানো হয় এবং মিছিল থেকে বিনা উসকানিতে ছাত্রদলের উল্লিখিত সমর্থকদের ওপর হামলা চালানো হয়। 

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, এসব ঘটনা চলাকালে এবং পরবর্তীতে কোনরূপ তথ্য-প্রমাণ ছাড়াই স্থানীয় জনতার সঙ্গে কুয়েট শিক্ষার্থীদের এই ন্যাক্কারজনক সহিংসতাকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ‘ছাত্রদলের হামলা’ বলে পুরো ঘটনাটিকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করে রাজনৈতিক ফায়দা লুটার চেষ্টা চালানো হয়।

সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- ছাত্রদলের সহ-সভাপতি হাবিবুল বাশার, সাফি ইসলাম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাহেদ হাসান, হাসানুর রহমান, শাহাদাত হোসেন, সোহেল রানা ও নুরুজ্জামান চন্দন।