খেলাধুলা

ব্যাটিং অর্ডারে অদল-বদল, বিশ্বকাপ যেন পরীক্ষার মঞ্চ

সাবেক অধিনায়ক গাজী আশরাফ হোসেনি লিপু একটি জাতীয় দৈনিকের কলামে বিশ্বকাপে বাংলাদেশের ব্যাটিং অর্ডারের অদল-বদল নিয়ে তুলনা করেন ক্লাব ক্রিকেটের সঙ্গে। আসলে হচ্ছেটা কি?  

ওপেনিংয়ের প্রকট সমস্যা নিয়ে বাংলাদেশ ভারতের বিমান ধরে। অভিজ্ঞ লিটন দাসের অফ ফর্মের সঙ্গে তরুণ তানজীদ হাসান তামিম এখনো ছন্দ খুঁজে পাচ্ছেন না। তবে টিম ম্যানেজম্যান্ট লিটন-তানজীদের প্রতি আস্থা দেখিয়ে টানা তিন ম্যাচে ওপেনিংয়ে পরিবর্তন আনেনি। 

কিন্তু এর পরের গুরুত্বপূর্ণ তিনটি পজিশনে প্রতি ম্যাচেই হচ্ছে অদল-বদল। মূলত তিন-চার-পাঁচ নম্বর পজিশনে সবশেষ তিন ম্যাচে দেখা গেছে দুই রকমের ব্যাটিং অর্ডার। 

আফগানিস্তান ম্যাচে তিনে খেলেন মেহেদি হাসান মিরাজ, চারে নাজমুল হোসেন শান্ত আর পাঁচে সাকিব আল হাসান। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে শান্ত আসেন তিনে, তারপর সাকিব-মিরাজ। আর সবশেষ নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে দেখা গেছে আফগানিস্তান ম্যাচের মতো ব্যাটিং অর্ডার। 

মিরাজ-শান্ত-সাকিব একেক ম্যাচে একেক অর্ডারে নামলেও পরের তিনটি পজিশন আবার চূড়ান্ত। এখানে কোনো অদল-বদল হয়নি। মুশফিক তিনটি ম্যাচেই ছয়ে খেলেছেন, দুই ম্যাচে সাতে তাওহীদ হৃদয় ও আটে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ কিংবা তার জায়গায় খেলা শেখ মেহেদী হাসান। আফগানিস্তান ম্যাচে হৃদয়-মাহমুদউল্লাহদের নামতে হয়নি।  

মিরাজ দুই ম্যাচে তিনে নেমে করেছেন ৫৭ ও ৩০। আরেক ম্যাচে পাঁচে নেমে আউট হন ৮ রানে। শান্ত চারে নেমে দুই ম্যাচে করেন ৫৭ ও ৭। আরেক ম্যাচে তিনে নেমে ফেরেন শূন্য রানে। আর সাকিব দুই ম্যাচে পাঁচে নেমে করেন ৪০ ও ১৪। আরেক ম্যাচে ফেরেন ১ রানে। মুশফিকে তার নির্দিষ্ট পজিশন ছয়ে নেমে দুটিতে হাঁকান ফিফটি, আরেকটিতে অপরাজিত থাকেন। হৃদয় ১ ম্যাচে ৩৯ ছাড়া বাকি দুই ম্যাচে ব্যর্থ। মাহমুদউল্লাহকে আফগানিস্তান ম্যাচে নামতে হয়নি আর নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে গতকাল খেলেন ৪০ রানের গুরুত্বপূর্ণ এক ইনিংস। 

এমন অদল-বদলের কারণ জানেন না সহ-অধিনায়ক শান্ত। নিউ জিল্যান্ড ম্যাচ শেষে এই ব্যাটার বলেন এটি বলতে পারবেন অধিনায়ক-কোচ, ‘এটা কোচ এবং অধিনায়ক বলতে পারবে। আমরা যারা ব্যাটিং করি সবাই জানি কে কখন ব্যাটিং করবে। কিন্তু এটার পেছনের কারণ অধিনায়ক এবং কোচ আরও পরিস্কার করে বলতে পারবে।’

‘সত্যি বলতে একটু তো মানিয়ে নিতেই হয়। আমার মনে হয় এখানে সবার সেই ফ্লেক্সিবিলিটি থাকার দরকার যেকোনো সময় যেকোনো জায়গায় ব্যাটিং করা। এটা বলব না যে হঠাৎ করেই হয়। সব ব্যাটাররাও জানে। এটা নিয়ে চিন্তা করার খুব বেশি প্রয়োজন মন হচ্ছে না। অধিনায়ক এবং কোচ যেভাবে সিদ্ধান্ত নেয় আমরা সেভাবে ব্যাটিং করার চেষ্টা করি।’ -আরও যোগ করেন শান্ত। 

একটি অনুষ্ঠানে ব্যাটিং অর্ডার নিয়ে কথা বলতে গিয়ে হতাশা প্রকাশ করেন সাকিবদের গুরু সালাউদ্দিন, ‘ব্যাটিং অর্ডার ঠিক নেই, ব্যাটারদের মানসিকতায়ও হয়তো ঠিক নেই কে কিভাবে কোন ভূমিকায় খেলবে। একদিন কেউ খেলছে পাঁচে, একদিন তিনে, একদিন ওপেনার। আমার মনে হয় ব্যাটিং অর্ডারে ব্যাটারদের একটু স্যাটেল হতে দেয়া উচিত।’

‘যেহেতু আমরা বলি এটা মাইন্ড গেইম, আমাদের কিন্তু সেটা সেভাবে ঠিক করতে হবে আমাদের ব্যাটাররা সেটা কিভাবে মানিয়ে নিচ্ছে। মুখে মুখে সবাই বলতে পারে আমি অনেক আত্মবিশ্বাসী, যেখানে দেবেন সেখানেই খেলে ফেলব। কিন্তু এটা আসলে এভাবে হয় না।’ -আরও যোগ করেন সালাউদ্দিন।

পরিস্থিতির উপর বিবেচনা করে কখনো কখনো ব্যাটিং অর্ডারে পরিবর্তন আসতে। মাঝেমধ্যে এটি হওয়ার কথা থাকলেও বাংলাদেশ দলে যেন নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশ্বকাপের মতো আসর যেন পরীক্ষা-নিরীক্ষার জায়গা। তিন ম্যাচ শেষ, আর বাকি ৬টি। বাংলাদেশ ম্যানেজম্যান্ট কি বুঝতে পারবে এবার?