খেলাধুলা

‘আসার রাস্তা খোলা, যাওয়ার রাস্তাও খোলা’

‘অনেকদিন পর বিসিবির প্রাঙ্গনে আসা নতুন দায়িত্ব নিয়ে। এই ভূমিকায় কখনো কাজ করিনি। কিন্তু কাজটা সম্পর্কে অবগত।’

২০১৩ সালের পর অনেকটাই বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড থেকে দূরত্ব তৈরি করে নিয়েছিলেন গাজী আশরাফ হোসেন লিপু। পরিচালনা পরিষদের নির্বাচনে হারের পর তাকে আর দেখা যায়নি দেশের ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থার কোনো ভূমিকায়। অথচ গাজী আশরাফ হোসেনের কত পরিচয়…১৯৮৬ সালে তার নেতৃত্বেই প্রথম আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ম্যাচ খেলতে নেমেছিল বাংলাদেশ। পরে ক্রিকেট প্রশাসক হিসেবেও লম্বা সময় দেখা গেছে ।

১৯৯৭ সালের আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফি জেতা দলের ম্যানেজারও ছিলেন। ২০০৭ সালে অ্যাডহক কমিটির প্রধান হিসেবে আইসিসির বোর্ড মিটিংয়ে পাঁচবার বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্বও করেছেন। বিসিবির পরিচালক, ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের পরিচালক, বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিলের প্রধান...কত অভিজ্ঞতা তার ঝুলিতে।

লম্বা সময় পর তাকে বোর্ডে ফেরানো হয়েছে জাতীয় নির্বাচক কমিটির প্রধান করে। বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের কাছে প্রধান নির্বাচকের যে তালিকা গিয়েছিল সেখানে গাজী আশরাফের নাম দেখে জিজ্ঞাসা ছিল, ‘উনি কি কাজ করবেন?’

এমন প্রশ্নের পেছনের কারণ, বিসিবি এর আগে নানা সময়ে গাজী আশরাফকে পেতে চেয়েছিল। কিন্তু মায়ের অসুস্থতা ও নিজের ব্যস্ততার কারণে বিসিবির প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। এবার প্রধান নির্বাচকের প্রস্তাব পাওয়ার পর বেশ কিছু বিষয় সামনে আনেন তিনি। বোর্ড থেকে সেসব বিষয় নিয়ে সবুজ সংকেত পাওয়ার পরই কাজ করতে রাজী হয়েছেন। বোর্ড তাকে দুই বছরের জন্য নিয়োগ দিয়েছে। যার শুরুটা হচ্ছে পহেলা মার্চ থেকে।

যে বিষয়গুলো গাজী আশরাফ সামনে এনেছিলেন তার মধ্যে অন্যতম ছিল, স্বাধীনভাবে নির্বাচক প্যানেল কাজ করতে পারবে তো? বোর্ড থেকে সেই নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছে বলে জানালেন তিনি।

‘স্বাধীনতা থাকবে এই ব্যাপারে কথা হয়েছে। তবে আগের প্রক্রিয়া নিয়ে আমি আর কথা বাড়াতে চাই না। কারণ, এটা নিয়ে অনেক কথা হয়েছে। আমরা জানি যে এটা বড় একটা প্রক্রিয়া ছিল। দল নির্বাচন সেখানে অধিনায়ক কোচ নিশ্চিতভাবেই অংশগ্রহণ করবেন। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে যে প্রক্রিয়া মেনে চলে আমরা সেটাই রাখার চেষ্টা করবো।’

২০১৩ সালে চন্ডিকা হাথুরুসিংহে বাংলাদেশের কোচিং প্যানেলে যুক্ত হওয়ার পর নির্বাচক প্যানেলের সঙ্গে গণ্ডগোল বাঁধে। তখন ফারুক আহমেদ প্রধান নির্বাচক। তার কাজে হস্তক্ষেপ এবং পরবর্তীতে বিসিবি থেকে স্বাধীনতা না পাওয়ায় পদত্যাগ করেন। এবারও হাথুরুসিংহে আছেন। এবারও তার নির্বাচকদের কাজে হস্তক্ষেপ করার কথা। যদি করেন তাহলে কী করবেন গাজী আশরাফ? উত্তরটা তিনি দিয়েছেন এভাবে, ‘বল এখনো ডেলিভারি হয়নি। বলটা আগে করতে দিন। তারপরই না খেলবো। ঠিক আছে।’

আর যদি স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ না পান? গাজী আশরাফ খোলা মনেই বলেছেন, ‘আমি বিশ্বাস করি স্বাধীনভাবে না হলে কাজ করে তো কোনো আনন্দ নেই। রাস্তা সব সময় খোলা। আসার রাস্তাও খোলা। যাওয়ার রাস্তাও খেলা।’

গাজী আশরাফকে প্রধান নির্বাচক ও হান্নান সরকারকে নির্বাচক কমিটিতে যুক্ত করা হয়েছে। সঙ্গে আছেন আব্দুর রাজ্জাক। নিজের প্যানেল নিয়ে কাজের দিক থেকে শতভাগ সৎ থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন গাজী আশরাফ, ‘ক্রিকেট মানেই চ্যালেঞ্জ। আমি এবং আমার প্যানেল (হান্নান সরকার ও আব্দুর রাজ্জাক) যে নতুন দায়িত্ব পেয়েছি আমরা চেষ্টা করবো মেধা, প্রজ্ঞা, সততা ও একাগ্রতা দিয়ে আমাদের যেই সীমিত সম্পদ আছে সেটা দিয়ে… আমি বলবো না যে প্রচুর রিসোর্স আছে। সেটা থেকে প্রতিপক্ষের আলোকে, কোন বিদেশি দলের বিপক্ষে দেশে কিংবা বিদেশে কোন আলোকে বা গ্লোবাল টুর্নামেন্টে সেই আলোকে দেশের সেরা দলটা তৈরি করার চেষ্টা করবো।’