খেলাধুলা

এই জয় হয়তো সবার মুখে সামান্য হাসি ফোটাবে: শান্ত

রাজনৈতিক অস্থিতিশীল এক পরিস্থিতিতে পাকিস্তান সফরে গিয়েছিল বাংলাদেশ। পরিস্থিতি এখনও অনুকূলে আসেনি। ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’ হিসেবে বন্যা পুরো দেশকে নাড়িয়ে দিয়েছে। দেশের যখন এমন পরিস্থিতি তখন খেলায় মন টেকানো দায়। অথচ বাংলাদেশ দল রাওয়ালপিন্ডি টেস্টে অসম্ভবকে করেছে সম্ভব। পাকিস্তানকে ১০ উইকেটে হারিয়েছে নাজমুল হোসেন শান্ত দল। প্রথমবার পাকিস্তানকে টেস্টে হারানোর এই অর্জন সবার মুখে সামান্য হাসি ফোটাবে, এমনটাই বিশ্বাস করেন বাংলাদেশের অধিনায়ক শান্ত। ম্যাচ জয়ের পর সংবাদ সম্মেলনে নানা প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন তিনি।

জয়ের পেছনে কন্ডিশনের ভূমিকা কেমন ছিল? নাজমুল হোসেন শান্ত:  কন্ডিশন আমাদের সাহায্য করেছে। তাই আমরা ফল পেয়েছি।

আপনার কী মনে হয় পাকিস্তান আপনাদের একটু হালকাভাবে নিয়েছে এবং পিচ বুঝতে ভুল করেছে? নাজমুল হোসেন শান্ত: আমি এইরকম ভাবি না। আমরা জানি ওদের শক্তির জায়গা পেস বোলিং। স্পিনারদের পাশাপাশি শেষ দুই বছর ধরে পেস বোলিংয়ে আমরা ভালো করতেছি। আমার মনে হয় না তারা পিচ বুঝতে পারেনি। আমরা ভালো বল করেছি। তাদের বোলাররা ভালো করেছে এবং আমাদের ব্যাটসম্যানরা এই ধরনের গরম কন্ডিশনে ভালো ব্যাটিং করেছে। পাশাপাশি আমাদের ওপেনাররা ওইদিন ১২ ওভার ভালো ব্যাটিং করেছে।

চতুর্থ দিনে ম্যাচ নিশ্চিত ড্রয়ের দিকে ছিল। সেখান থেকে ম্যাচ জয়। পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রথমবার জয় পাওয়া… নাজমুল হোসেন শান্ত:  এটা দারুণ অনুভূতি। আজকে সকালে যখন মাঠে এসেছি, তখন থেকেই বিশ্বাস ছিল এই ম্যাচ আমরা জিততে পারব। কারণ, আমরা তখন ৯৪ রানে এগিয়ে ছিলাম। স্পিনারদের জন্য পিচ কঠিন ছিল। পেসারদের বল বেশ উঁচু-নিচু হচ্ছিল। তখন আমাদের মধ্যে বিশ্বাস ছিল যদি সঠিক জায়গায় বল ফেলতে পারি তাহলে আমরা ম্যাচ জিততে পারব। এটাই ঘটেছে।

মুশফিক, লিটন, মেহেদির ইনিংস পাকিস্তানকে চাপে ফেলেছিল। তাদের ইনিংস কিভাবে দেখেন? নাজমুল হোসেন শান্ত: আমি কাউকে তাদের পারফরম্যান্সের জন্য আলাদা করে কৃতিত্ব দিতে চাই না। আমরা জানি মুশফিক ভাই কতটা অভিজ্ঞ এবং তিনি প্রতিদিনই সঠিক কাজটা করেন। তিনি তার কাজ করেছেন। এতে আমরা খুশি। এই ধরনের ইনিংস তার কাছে প্রতিদিনই প্রত্যাশা থাকে। কৃতিত্ব প্রত্যেকটা ব্যাটারের কাছে যাবে। বিশেষ করে ওপেনারদের কাছে। কারণ, তারা যেভাবে এই বোলিং আক্রমণের বিপক্ষে নতুন বল সামলিয়েছে এটা দারুণ। এটা পুরোটা দলগত ইফোর্ট। এরপরে আমরা দারুণ বোলিং করেছি।

এই ধরনের রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে এই জয়কে কিভাবে ব্যাখ্যা করবেন? এই সময় এমন জয় হয়তো দরকার ছিল… নাজমুল হোসেন শান্ত: এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমার মনে হয় শেষ এক মাসে আমরা কঠিন সময়ের মধ্যে ছিলাম। এখনও এখানে (বাংলাদেশে) কিছু সমস্যা আছে। আমরা সবাই পরস্পরকে সমর্থন করি। এই জয় হয়তো সবার মুখে সামান্য হাসি ফোটাবে। এর জন্য আমরা খুশি। আমরা চেষ্টা করব পরের ম্যাচে এই রকম কিছু কাজ করব।

দেশের বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে সবাই উদ্বিগ্ন ছিলেন… নাজমুল হোসেন শান্ত: প্রথমত দুঃখজনক। আসলে এটা আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে। সবাই আমরা জানি বাংলাদেশের মানুষ সব সময় একজন আরেকজনের পাশে ছিল বিপদে। আমি দেখছি সবাই চেষ্টা করছে ওখানে যারা বিপদে তাদেরকে সাহায্য করতে। আমাদের দলের পক্ষ থেকে প্রত্যেকটা খেলোয়াড় যার যার জয়গা থেকে চেষ্টা করছে কিভাবে সাহায্য করা যায়। দল হিসেবে আমরা চেষ্টা করছি কিভাবে কন্ট্রিবিউট করা যায়। প্রত্যেকটা খেলোয়াড় সম্পৃক্ত আছে, যতটুকু সম্ভব সাহায্য করা যায় ততটুকু করছে।

ব্যক্তিগত পারফরম্যান্স নাকি দলগত- কোনটাকে গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়েছে? নাজমুল হোসেন শান্ত: অবশ্যই আমার মনে হয় পুরোটা একটা টিম ইফোর্ট ছিল। মুশফিক ভাইয়ের ইনিংসটা আউটস্ট্যান্ডিং ছিল। অবশ্যই একটা স্পেশাল ইনিংস, আমাদের দলকে এগিয়ে নিতে সাহায্য করেছে। কিন্তু ওভারঅল যদি পুরো ম্যাচটা দেখেন ব্যাটিং, বোলিং, ফিল্ডিং- পুরো একটা টিম ইফোর্ট ছিল। আমি অধিনায়ক হিসেবে সব সময় চিন্তা করি যে দল হিসেবে আমরা যেন প্রত্যেকটা ম্যাচ খেলি। কখনও ফল আসবে, কখনও আসবে না। যেন দল হিসেবে খেলি। এই ম্যাচে আমরা প্রত্যেকটা সময় দল হিসেবে খেলেছি। খুবই ভালো লাগছে।

সাকিব এমন অবস্থাতে কিভাবে ঘুরে দাঁড়ালো বলে মনে হয়? নাজমুল হোসেন শান্ত: আমি যতটুকু বুঝি যখন দেশের হয়ে মাঠে নামেন অনেক ডেডিকেটেড একজন মানুষ। দলের জয়ের জন্য যা যা দরকার সবটুকু করেন। ব্যক্তিগত জীবন একদিকে সরায় দিয়ে দলের জন্য কিভাবে আমি ভালো করতে পারি সেই দিকে ফোকাস করা। দলকে কিভাবে সাহায্য করতে পারি, আরেকজন জুনিয়র খেলোয়াড়কে সাহায্য করতে পারি- এই জিনিসগুলো উনি খুব আলাদাভাবে করতে পারেন। খুবই ডেডিকেটেড মানুষ। এই রকম অবস্থাতে থাকার পরও এই রকম পারফরম্যান্স করা, এইভাবে ইনপুট দেওয়া বিশেষ করে বোলিংয়ে- এটা আউটস্ট্যান্ডিং। তার কাছ থেকে আমরা এই রকমই আশা করি। সামনের ম্যাচে এর থেকে ভালো কিছু আশা করি।

দেশের বাইরে এই জয় কী বার্তা দেয়? নাজমুল হোসেন শান্ত: আমরা দেশের বাইরে খুব বেশি ম্যাচ জিততে পারি না। আমার মনে হয় নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষের জয়ের পর এবার জিতলাম। যখন এই বছর ওয়ার্ল্ড টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের পরিকল্পনা করেছিলাম তখন বাইরের ম্যাচ কিভাবে জিততে পারি বা ড্র করতে পারি, ঘরের মাঠে জিততে পারি- এই রকম একটা পরিকল্পনা ছিল। আল্লাহ রহমতে ভালো একটা ফল এসেছে। এই জয়ের মাধ্যমে খেলোয়াড়দের মধ্যে বিশ্বাস আরও বাড়বে। দর্শকদের মধ্যেও। আশা তো থাকবে সামনের ম্যাচ সিরিজগুলোতে কিভাবে আরও ভালো খেলতে পারি।