বগুড়ায় বিদ্যুতায়িত হয়ে পাঁচ জনের মৃত্যুর ঘটনায় রথের ৩২ ফুট উঁচু চূড়া নিয়ে সর্বোত্র চলছে আলোচনা-সমালোচনা। খোদ বগুড়া জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম রথের চূড়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি বলেছেন, ‘দুর্ঘটনায় আমরা প্রাথমিকভাবে আয়োজক কমিটির অব্যবস্থাপনা পেয়েছি। গম্বুজের যে চূড়া তারা করেছে, ওটা নিচে নামাতে পারত। এটা উঠানো এবং নামানোর জন্য একজনের দায়িত্বে থাকার কথা। তারা এটা যথাযথভাবে করতে পারেনি।’
এদিকে, ইসকন বগুড়া শাখার অধ্যক্ষ খরাজিত কৃষ্ণদাস ব্রহ্মচারী বলছেন, ‘প্রতি বছর রথ উৎসবের আগে জেলা প্রশাসন, পুলিশ ছাড়াও পূজা উদযাপন পরিষদের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক হয়। সেখানে কখনোই রথের চূড়া নিয়ে কেউ প্রশ্ন তোলেনি। দুর্ঘটনার পর সবাই রথের চূড়া নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন যা দুঃখ জনক।’
আরও পড়ুন: বগুড়ায় রথযাত্রায় আহতদের খোঁজ নিলেন স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী
তিনি আরও বলেন, ‘চূড়াটি এমন ভাবে তৈরি যা নিচে হাতল ঘুরিয়ে উঁচু নিচু করা যায়। রথের চূড়ায় বিদ্যুতের তার লেগে যাওয়ার পর রথের ওপরে বসে থাকা আমিসহ অন্তত ২৫ জন অলৌকিকভাবে প্রাণে বেঁচে গেছি।’
রথ উৎসবে দুর্ঘটনার বর্ণনা করে খরাজিতা কৃঞ্চদাস ব্রহ্মচারী বলেন, ‘রথটি চাকাসহ উচ্চতা ৮ ফুট। এর সঙ্গে চূড়া ৩২ ফুট। সব মিলিয়ে চূড়ার উচ্চতা ৪০ ফুট। চূড়াটি নিচু করার জন্য রথের সঙ্গে হাতলসহ চাকা রয়েছে। চাকা ঘুরিয়ে চূড়াটি প্রয়োজন মতো উঁচু-নিচু করা যায়। রোববার রথ উৎসবে চূড়া উঁচু-নিচু করার দায়িত্বে ছিলেন অলোক এবং সুশান্ত নামের দুইজন। শৃঙ্খলার দায়িত্বে ছিলেন ইসকনের ১০০ জন স্বেচ্ছাসেবক। সেউজগাড়ি আমতলা এলাকায় সড়কে বিদ্যুতের তার দেখে অলোক চাকা ঘুরিয়ে চূড়া নিচু করার কাজ করছিলেন। তারের কাছাকাছি যাওয়ার আগে আমি বারবার চূড়াটি নামাতে বলেছি। কিন্তু সামনে কয়েক হাজার ভক্ত রশি ধরে রথ জোরে টেনে নিয়ে যাওয়ার কারণে চূড়াটি বিদ্যুতের তারে লেগে যায়। সেসময় রথের ওপরে যারা ছিলেন তারা যে যার মতো লাফিয়ে পড়েন। অলোক সঙ্গে সঙ্গে মারা গেলে সুশান্ত চাকার হাতলে হাত দেন। তিনিও গুরুতর আহত হন।’
আরও পড়ুন: মঙ্গলবার থেকে কাজ শুরু করবে তদন্ত কমিটি
খরাজিত কৃঞ্চদাস বলেন, ‘রথ জোরে টানার কারণে যেমন দুর্ঘটনা ঘটেছে, তেমনি অসংখ্য মানুষ প্রাণেও রক্ষা পেয়েছেন। জোরে টানার কারণে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই রথের চূড়া ভেঙ্গে বিদ্যুতের তার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।’
তিনি বলেন, ‘রথের পুরো কাঠামোটি স্টিলের তৈরি। এর ওপরে বসে ছিলেন অন্তত ২৫ জন। নিচে যারা রথের কাঠামো ধরে ঠেলে নিয়ে যাচ্ছিলেন তারাই হতাহত হয়েছেন।’
নেসকো -১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল মোন্নাফ জানান, ‘সেখানে ১১ হাজার ভোল্টেজের বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন ছিল। নেসকো বৈদ্যুতিক খুঁটির তারের উচ্চতা ১২ মিটার। অর্থাৎ প্রায় ৪০ ফুট। এর ওপরে কোনো ধাতব পদার্থের সঙ্গে সংস্পর্শ লাগলে দুর্ঘটনা ঘটবে। রথের উচ্চতাও ১২ মিটার ছিল। রথের উপরিভাগে লোহার দণ্ডে কোনো আবরণ ছিল না। এ কারণে রথের দণ্ড বিদ্যুতের সংস্পর্শে আসে। এতে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে হতাহতের ঘটনা ঘটে।’
এক্সক্লুসিভ বাংলা নিউজ নামে একটি ফেসবুক পেজে ভিডিও পোস্ট করে লেখা হয়েছে, ‘রথের উচ্চতা নিয়ে সচেতন হওয়া খুবই জরুরি।’
প্রসঙ্গত, বগুড়ায় রথযাত্রায় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও ৪০ জন। রোববার (৭ জুলাই) বিকেল সোয়া ৫টার দিকে বগুড়া শহরের সেউজগাড়ী আমতলা মোড়ে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন- অলোক, আতশি রানী, রঞ্জিতা, নরেশ মোহন্ত ও জলি রানী সাহা।
পুলিশ জানিয়েছে, বিকেল ৫টার দিকে সেউজগাড়ী ইসকন মন্দির থেকে রথযাত্রা বের হয়। সেউজগাড়ী আমতলা এলাকায় পৌঁছালে রথের চূড়াটি সড়কের ওপর দিয়ে যাওয়া উচ্চ ভোল্টেজের বৈদ্যুতিক তারের সংস্পর্শে আসে। এতে আগুন ধরে যায়। এ সময় রথের ওপরে বসে থাকা এবং নিচে থাকা অনেকে আহত হন। তাদের উদ্ধার করে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে পাঁচজনকে মৃত ঘোষণা করেন।