জুলাই শহিদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক ও জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম বলেছেন, “কোনো রাজনৈতিক দলের দালালি আপনাদের (পুলিশ) কাছ থেকে আমরা প্রত্যাশা করি না। আপনারা এটা করবেন না। পুলিশ দায়িত্বশীল হলে আগামী ছয় মাসেই বাংলাদেশ ঠিক হয়ে যাবে।”
তিনি বলেন, “যারা গণহত্যায় সরাসরি জড়িত ছিল তাদের আমরা বিন্দুমাত্র ছাড় দেব না। পুলিশ হোক, আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ পরিচয় যা-ই হোক, এই পরিচয়গুলো মুখ্য নয়। তার বিরুদ্ধে যদি ডকুমেন্ট থাকে তাহলে আমাদের কাছে তার একমাত্র পরিচয় তিনি একজন খুনি, হত্যাকারী। তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।”
ছাত্র-জনতার আন্দোলনে রাজশাহী বিভাগের শহিদদের পরিবারকে জুলাই শহিদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন থেকে আর্থিক সহায়তা দেওয়ার অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। শনিবার (১৪ ডিসেম্বর) দুপুরে জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন সারজিস আলম।
শহিদদের লাশ কবর থেকে তুলে ময়নাতদন্ত না করার আহ্বান জানিয়ে সারজিস আলম বলেন, “চব্বিশের অভুত্থানে যারা শহিদ হয়েছেন, তাদের হত্যা মামলার জন্য কারো লাশ উত্তোলন করা যাবে না। আমরা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বিচারিক যে মন্ত্রণালয় রয়েছে এবং সংশ্লিষ্ট সবাইকে একটি কথা বলে দিতে চাই- যে ভাইদের রক্তের ওপরে ওই চেয়ারে আপনারা বসে রয়েছেন, আপনারা তাদের লাশ উত্তোলন করতে পারেন না।”
তিনি প্রশ্ন তোলেন, “১৫ আগস্ট শেখ মুজিবুর রহমান এবং তার পরিবারকে হত্যার সঙ্গে যারা জড়িত ছিল তাদের বিচারের জন্য যদি ডেডবডি (মরদেহ) কবর থেকে তোলা না হয়, তাহলে চব্বিশের অভুত্থানে নতুন বাংলাদেশ আনতে গিয়ে যারা শহিদ হয়েছেন, কেন তাদের লাশ উত্তোলন করতে হবে?”
গণহত্যায় জড়িত কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, “গণহত্যার সঙ্গে আমরা পুরো বাংলাদেশ পুলিশকে জড়িয়ে দেব না। তবে, দায়সারা কথাও আমরা মেনে নেব না যে, “খুনি হাসিনা বলেছিল বলে গুলি করেছি”। হাসিনা যদি গুলি চালানোর হুকুমও দেয়, তাহলে একজন ব্যক্তি হিসেবে আপনার মনুষ্যত্ববোধ, দেশের মানুষের জন্য যে শপথ নিয়েছেন সে মনুষ্যত্ববোধ কোথায় ছিল? কতিপয় পুলিশ সদস্য সরাসরি হত্যাকাণ্ডে জড়িত ছিল, তাদের কেন এখনো বিচার হচ্ছে না? আজকে আমরা দেখছি, ওইসব পুলিশ নতুন করে পোস্টিংয়ের মাধ্যমে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। খুনের শাস্তি কি শুধু বদলি?”
সারজিস আলম বলেন, “পুলিশ সেই মামলাগুলো নিচ্ছে না, যে মামলাগুলোতে তাদের সদস্যদের নাম রয়েছে। বিভিন্ন জায়গায় রাজনৈতিক সমঝোতা হচ্ছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল খুনি আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগকে টাকার বিনিময়ে বাঁচানোর জন্য ব্যাকডোরে নেগোশিয়েশন করছে। এই যে মামলা বাণিজ্য, এতে রাজনৈতিক দল যেমন জড়িত রয়েছে তেমনি প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিও জড়িত রয়েছেন। নতুন বাংলাদেশেও পুলিশ সদস্যরা বিভিন্ন জায়গায় মামলাবাণিজ্য করছে।”
অনুষ্ঠানে রাজশাহী বিভাগের ৪৬ জন শহিদের পরিবারকে পাঁচ লাখ টাকার চেক দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানে বিভাগীয় কমিশনার খোন্দকার আজিম আহমেদ ও রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মোহাম্মদ আবু সুফিয়ানসহ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কয়েকজন সমন্বয়ক বক্তব্য দেন।