গত চার বছর এক রকম উন্নয়ন বঞ্চনার মধ্যেই থাকার কথা জানিয়েছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনের সাধারণ মানুষজন। সম্প্রতি এই আসনের বিএনপি দলীয় সংসদ সদস্য হারুনুর রশিদ সংসদ থেকে পদত্যাগ করায় আগামী ১ ফেব্রুয়ারি উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে এখানে। আর এই নির্বাচনে যে প্রার্থী জিতুক না কেন তার কাছে স্থানীয়দের প্রত্যাশা থমকে যাওয়া উন্নয়ন বঞ্চনা থেকে মুক্তি পাওয়া।
এদিকে প্রার্থীরা বলছেন, এক বছরেরও কম সময়ের মধ্যে জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করা বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে তাদের কাছে। যদিও এই আসনটিতে আওয়ামী লীগের আগে দুইবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়া আব্দুল ওদুদ নিজের পূর্বের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে ভোটারদের প্রত্যাশা পূরণের চেষ্টা করবেন বলে জানিয়েছেন।
নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা গেছে, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনের উপ নির্বাচনে দুইজন দলীয় প্রার্থীসহ ৩ জন মনোনয়ন পত্র দাখিল করেন। তারা হচ্ছেন- আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আব্দুল ওদুদ, বিএনফের টেলিভিশন প্রতীকের প্রার্থী কামরুজ্জামান খাঁন ও আপেল প্রতীকের প্রার্থী সামিউল হক লিটন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চাঁপাইবাবগঞ্জ পৌর এলাকার উদয়ন মোড় থেকে ফায়ার সার্ভিস মোড় পর্যন্ত সড়কটি খানাখন্দকে ভরা। দীর্ঘদিন ধরে সংস্কারের অভাবে বোঝার উপায় নেই এটি একটি পাকা রাস্তা। বর্ষায় সড়কটির মধ্যে পানি জমে থাকায় দুর্ঘটনা ঘটে। এছাড়া শুষ্ক মৌসুমে জমে থাকা ধুলা-বালুর কারণে পরিবেশ দূষণ হয়। ফলে নাজেহাল হয়ে পড়েছেন সড়কটির পাশে বসবাসকারী মানুষজন ও দোকান মালিকরা।
খানাখন্দকে ভরা সড়কের দেখা মিলবে জেলা শহরের অনেক জায়গায়। শুধু শহরই নয়, বেশিরভাগ গ্রামীণ সড়কেরও সংস্কার হয়নি বছরের পর বছর। এর মধ্যে কোনো কোনো সড়ক একেবারেই চলাচলের অনুপোযোগী হয়ে পড়েছে।
রেলওয়ের অবস্থা আরও করুণ। করোনা মহামারির সময় যাত্রী কমে যাওয়ায় চাঁপাইনাববগঞ্জ থেকে ৫টি ট্রেন বন্ধ হয়ে যায়। পরে সবকিছু স্বাভাবিক হলেও চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে বিভিন্ন রুটে ছেড়ে যাওয়া ওই ট্রেনগুলোর একটি চালু হলেও বাকি চারটি ট্রেন এখনো বন্ধ রয়েছে।
আসিফ ইয়াসির নামের এক যুবক বলেন, ‘উন্নয়নের দিক থেকে অবহেলিত চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসন। বিগত ৪ বছরে ক্ষমতাসীন দলের সংসদ সদস্য না থাকায় বিভিন্ন উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত হয়েছি আমরা। এই উপ-নির্বাচনে যিনি নির্বাচিত হবেন তার মেয়াদ থাকবে খুবই কম। তারপরেও যিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হবেন তাকে অবশ্যই চাঁপাইনবাবগঞ্জের থেমে যাওয়া উন্নয়নের চাকা সচল রাখার সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে হবে। বিশেষ করে করোনায় বন্ধ হওয়া ট্রেনগুলো চালু করা, জেলায় একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিক্যাল কলেজ গড়ে তোলা হবে তার মূল লক্ষ্য।’
ফায়জার রহমান মানি নামের এক সংস্কৃতি কর্মী বলেন, ‘একাদশ জাতীয় নির্বাচনে আমরা বিএনপির সংসদ সদস্য পেয়েছিলাম। গত ১০ বছরের যে উন্নয়ন, সেটা চার বছরে এসে মোটামোটিভাবে থেমে গেছিলো। গত চার বছেরে যিনি সংসদ সদস্য ছিলেন তাকে দিয়ে দৃশ্যমান কোনো উন্নয়ন দেখতে পাইনি আমরা।’
উপ-নির্বচানে যিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হবেন তার কাছে চাওয়া কী এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘যিনি নির্বাচিত হবেন তার মেয়াদ খুবই অল্প। তারপরও চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে সোনামসজিদ পর্যন্ত রেল লাইন সম্প্রসারণ এবং দুই লেনের সড়ককে চারলেন উন্নত করার কাজটা যেন তিনি করেন এটাই আমার প্রত্যাশ।’
উপ-নির্বাচনে আপেল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী (আওয়ামী লীগ বিদ্রোহী) সামিউল হক লিটন বলেন, ‘মাত্র ১১ মাসের এমপি নির্বাচিত হয়ে উন্নয়নের বিরাট ফিরিস্তি দেওয়াটা হবে একেবারে মিথ্যা বলা। ব্যক্তিগত জীবনে আমি কখনই মিথ্যা কথা বলিনি এবং পছন্দও করি না। ১১ মাসে যতটুক উন্নয়ন করা সম্ভব ততোটুক করবো। মাত্র ১১ মাসে পাঁচ বছরের উন্নয়ন আশা করাটা অযৌক্তিক।’
আওয়ামী লীগ প্রার্থী আব্দুল ওদুদ বলেন, ‘চাঁপাইনবাগঞ্জ শহর এবং চরাঞ্চলের মানুষ আমার পাশে আছেন। আগে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার কারণে অনেক উন্নয়ন করেছি। মানুষের কাছে আমি পরীক্ষিত। পূর্বের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে এবারও নির্বাচিত হয়েই জনসাধারণের পাশে থেকে কাজ করতে চাই।’
নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা গেছে, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনে মোট ভোটার রয়েছেন ৪ লাখ ১১ হাজার ৪৯৫ জন। এরমধ্যে পুরুষ ভোটার ২ লাখ ৮ হাজার ৮৮৩ জন ও নারী ভোটার ২ লাখ ৫ হাজার ৬১২ জন। এই আসনে ১৭২টি ভোট কেন্দ্রের ভোট কক্ষ আছে ১২৪০টি।