প্রার্থীদের প্রচার প্রচারণাম সরগরম সিলেট মহানগরী। বিরামহীন প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করছেন সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনের মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা। তাদের এখন দম ফেলার ফুরসত নেই। প্রচণ্ড গরম উপেক্ষা করে ভোট চেতে প্রার্থীরা এ বাড়ি থেকে ও বাড়িতে ছুটছেন আর দিচ্ছেন নানা প্রতিশ্রুতি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত শুক্রবার থেকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আহমদ হোসেন, কেন্দ্রীয় নেতা সুজিত রায় নন্দী ও বলদেব কৃষ্ন দাস সিলেটে অবস্থান করছেন। তারা আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীকে সঙ্গে নিয়ে লিফলেট বিতরণ ও মতবিনিময় সভাসহ বিভিন্ন প্রচারণায় অংশ নিচ্ছেন। আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়নের ফিরিস্তি তুলে ধরে উন্নয়নের স্বার্থে নৌকায় ভোট দিতে ভোটারদের কাছে আহ্বান জানাচ্ছেন তারা। একই সঙ্গে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের মধ্যে ঐক্য তৈরি করে তারা সিলেটে নৌকা প্রতীকের বিজয় নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছেন।
জাতীয় পার্টির ১৫ সদস্যের কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিদল গত রোববার সিলেটে এসেছে। প্রেসিডিয়াম সদস্য আতিকুর রহমান আতিকের নেতৃত্বে দলের অন্য সদস্যরা হলেন- দলের চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা সেলিম উদ্দিন, মনিরুল ইসলাম মিলন, আবদুল্লাহ সিদ্দিকী, ভাইস চেয়ারম্যান সাব্বির আহমেদ, এম এ মুনিম চৌধুরী বাবু, যুগ্ম মহাসচিব ফখরুল আহসান শাহজাদা, মো. বেলাল হোসেন, সৈয়দ মঞ্জুর হোসেন মঞ্জু, সাংগঠনিক সম্পাদক মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন খালেদ। নির্বাচন পরিচালনা সমন্বয় কমিটির নেতারা সরেজমিন জাতীয় পার্টির সিলেট সিটি মেয়র প্রার্থী মো. নজরুল ইসলাম বাবুলের সঙ্গে সমন্বয় করে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিচ্ছেন।
এছাড়া ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ সমর্থিত প্রার্থী মাওলানা মাহমুদুল হাসানের পক্ষে প্রচারণা চালাতে ঢাকা থেকে সংগঠনটির একাধিক নেতা সিলেটে অবস্থান করছেন। তারা হাতপাখা প্রতীকের সমর্থনে বন্দরবাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ করছেন।
আর মাত্র ১৩ দিন পরই অনুষ্ঠিত হবে সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ভোটগ্রহণ। এ নির্বাচনে বিএনপি অংশ না নিলেও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির প্রার্থীর মধ্যে মূল লড়াই হবে বলে ধারণা করছেন ভোটাররা। এছাড়া ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মনোনীত হাফেজ মাওলানা মাহমুদুল হাসানও রয়েছেন আলোচনায়।
জাতীয় পার্টির প্রার্থী নজরুল ইসলাম বাবুল জয়ের ব্যপারে আশাবাদী
সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে লড়ছেন- বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ (নৌকা) মনোনীত প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী, জাতীয় পার্টির (লাঙ্গল) প্রার্থী নজরুল ইসলাম বাবুল, ইসলামী আন্দোলনের (হাতপাখা) প্রার্থী মাহমুদুল হাসান, জাকের পার্টির (গোলাপ ফুল) প্রার্থী জহিরুল আলম এবং ঘোড়া প্রতীক নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী মোহাম্মদ আবদুল হানিফ, বাস গাড়ি প্রতীকে মো. শাহ জাহান মিয়া ও ক্রিকেট ব্যাট প্রতীক নিয়ে ছালাহ উদ্দিন রিমন।
এই নির্বাচনে বিএনপি অংশ না নিয়ে তাদের নেতাকর্মীদের প্রার্থী হওয়া থেকে বিরত রাখার চেষ্টা চালায়। মেয়র পদে বর্তমান মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীসহ শীর্ষ কিছু নেতাদের দলটি কাউন্সিলর পদে নির্বাচনে অংশ গ্রহণ থেকে বিরত রাখতে পারলেও ৪৩ জনকে আটকাতে পারেনি। সর্বশেষ সোমবার (৫ জুন) রাতে তাদের দল থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করেছে বিএনপি।
৩৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী ফজলুল করিম ফুল মিয়া বলে, যতই গরম হোক ভোটারদের কাছে যেতে হবে। তিনি তার প্রতীক টিফিন ক্যারিয়ারের জয় হবে বলে আশা প্রকাশ করেন।
আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী মঙ্গলবার (৬ জুন) সকালে নগরীর ওসমানী মেডিকেল কলেজ অডিটরিয়ামে মতবিনিময় সভায় অংশ নেন। এসময় তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার সব শ্রেণি- পেশার মানুষকে সমানভাবে দেখে। আমি নির্বাচিত হলে মানুষের জন্যে কাজ করে যাবো। চিকিৎসক সমাজ যে কোনো প্রয়োজনে আমাকে সব সময় পাশে পাবেন।
জয়ে আশাবাদী জাতীয় পার্টির মেয়র প্রার্থী নজরুল ইসলাম বাবুল। তিনি বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচন হলে লাঙ্গলের বিজয় কেউ রুখতে পারবে না। কোনো ধরনের ষড়যন্ত্র সহ্য করা হবে না। আমি প্রথম থেকেই ইভিএম সম্পর্কে আতঙ্ক বোধ করছি। কারণ ইভিএমের সঙ্গে সাধারণ মানুষের পরিচয় খুবই কম। নির্বাচন কমিশনের উচিত ইভিএম সম্পর্কে সাধারণ মানুষকে সচেতন করা।
ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী মাহমুদুল হাসান বলেন, জনগণ বিকল্প চায়। মাঠে ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। আধ্যাত্মিক নগরী সিলেটের জনগণ ইনশাআল্লাহ আমাকে বিজয়ী করবে।
সিলেট সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার ফয়সল কাদের বলেন, এখন পর্যন্ত নির্বাচনী পরিবেশ ভালো। আচরণবিধি মেনে চলার ব্যাপারে প্রার্থীদের সতর্ক করা হয়েছে। আমরাও নিয়মিত তদারকি করছি। একটি নিরেপেক্ষ, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন উপহার দিতে নির্বাচন কমিশন চেষ্টা করছে।
প্রসঙ্গত, সিলেট সিটি করপোরেশনের ৪২টি ওয়ার্ডে মোট ভোটার ৪ লাখ ৮৬ হাজার ৬০৫ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ২ লাখ ৫৩ হাজার ৭৬৩ জন। নারী ভোটার রয়েছেন ২ লাখ ৩২ হাজার ৮৪২ জন। মোট কেন্দ্র ১৯০টি এবং ভোটকক্ষ ১ হাজার ৩৬৪টি। এবারই প্রথম সিলেট সিটি নির্বাচনে সব কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।