পঞ্চগড়ের নৌকা ট্রাজেডির ঘটনাস্থল বোদা উপজেলার করতোয়া নদীর সেই আউলিয়া ঘাটে নির্মিত হবে ‘ওয়াই সেতু’। ১১৬ কোটি টাকা ব্যয়ে উপজেলার মাড়েয়া বামনহাট ও বড়শশী ইউনিয়নের আউলিয়া ঘাটে প্রায় ১ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এই সেতু নির্মাণ করা হবে। আগামী ১৯ অক্টোবর সেতুটির ভিত্তি প্রস্তর উদ্বোধন করবেন রেলমন্ত্রী ও পঞ্চগড় জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট নুরুল ইসলাম সুজন।
রোববার (৮ অক্টোবর) দুপুরে পঞ্চগড় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) নির্বাহী প্রকৌশলী মাহমুদ জামান এ তথ্য জানান।
প্রকৌশলী মাহমুদ জামান জানান, আগামী ১৯ অক্টোবর রেলমন্ত্রী বহুল প্রত্যাশিত মাড়েয়ার আউলিয়া ঘাটে ওয়াই আকৃতির সেতুর নির্মাণ কাজের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করবেন। ইতোমধ্যে ঠিকাদার নির্বাচন প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করা হয়েছে। এ সেতু এলাকার মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি। সেতুটি হলে স্থানীয় মানুষের দুর্ভোগ অনেকটাই কমে আসবে।
আউলিয়া ঘাটে ভয়াবহ নৌকা ডুবির ট্রাজেডির ঘটনায় গত বছরের ২ অক্টোবর করতোয়া নদীতে দেশের বৃহত্তম ‘ওয়াই সেতু’ নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছিলেন রেলমন্ত্রী। ঘোষণার পর ৭ অক্টোবর স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের তত্তাবধায়ক প্রকৌশলী (সেতু ডিজাইন) মোহা. রেজাউল করিমের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল আউলিয়া ঘাট এলাকা পরিদর্শন করেন এবং ওয়াই আকৃতির সেতুর খসড়া লেআউট যাচাই করেন। পরে পল্লী সড়কে গুরুত্বপূর্ণ সেতু নির্মাণ (দ্বিতীয় পর্যায়) প্রকল্পের আওতায় জেলার বোদা-ভাউলাগঞ্জ জিসি সড়কের আউলিয়া ঘাটে প্রায় ১ হাজার ১০০ মিটার দৈর্ঘ্য ও ৭ দশমিক ৩২ মিটার প্রস্থের ওয়াই আকৃতির সেতু নির্মাণের প্রস্তাব একনেকে পাস হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বোদা উপজেলার ১০টি ইউনিয়নের মধ্যে করতোয়া নদী বোদা বড়শশী ও কাজলদীঘি কালিয়াগঞ্জ ইউনিয়নকে উপজেলা সদর থেকে বিচ্ছিন্ন করেছে। এ কারণে সেতুর অভাবে রোগীবাহী অ্যাম্বুলেন্স, কৃষকদের উৎপাদিত পণ্যসহ যানবাহন জেলা শহরের ওপর দিয়ে প্রায় ৫০ কিলোমিটার পথ ঘুরে যাতায়াত করে। সেতু না থাকায় বড়শশী ও কালিয়াগঞ্জ ইউনিয়নের মানুষের উপজেলা শহরে যেতে ঝুঁকি নিয়ে নৌকায় পারাপার হতে হয়।
অন্যদিকে, প্রতি বছর বোদার বদেশ্বরী মন্দিরে মহালয়ার দিনে বিশেষ পূজা-অর্চনার আয়োজন করা হয়। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে পূজায় অংশ নেন অগণিত মানুষ। এসব পূণ্যার্থীদের বদেশ্বরী মন্দিরে যেতে নৌকায় করে নদী পারাপার করতে হয়। সেতুটি নির্মিত হলে বোদা ও দেবীগঞ্জের মানুষের যাতায়াত অনেক সহজ হবে বলছেন স্থানীয়রা।
প্রসঙ্গত, গত বছরের ২৫ সেপ্টেম্বর এই আউলিয়া ঘাটে নৌকাডুবিতে ৭২ জনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। সেদিন ছিলো মহালয়ার দিন। হিন্দু ধর্মের শতাধিক পুণ্যার্থী আউলিয়া ঘাট থেকে একটি নৌকায় উঠেছিলেন বোদেশ্বরী মন্দিরে পূজা-অর্চনায় যোগ দিতে। কিন্তু শতাধিক পুণ্যার্থীর ভারে নদীর মাঝে গিয়ে উল্টে যায় নৌকাটি।