চার দিন পর সম্পূর্ণভাবে নিভে গেছে সুন্দরবনের আমরবুনিয়া এলাকায় লাগা আগুন। পোড়া বনভূমিতে জমেছে জোয়ার ও বৃষ্টির পানি। মঙ্গলবার (৭ মে) দিনব্যাপী পর্যবেক্ষণ শেষে ওই এলাকায় আগুনের অস্বিত্ব পায়নি ফায়ার সার্ভিস ও বন বিভাগের সদস্যরা। তবে, অতিরিক্ত সতর্কতার জন্য আরও ২৪ ঘণ্টা পর্যবেক্ষণে রাখা হবে এলাকাটি বলে জানিয়েছেন, সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) কাজী মুহাম্মদ নুরুল করিম।
কাজী মুহাম্মদ নুরুল করিম বলেন, বনের আগুন লাগা স্থানে সোমবারের বৃষ্টি ও অমাবস্যায় জোয়ারের পানি প্রবেশ করেছে। পানি জমে থাকায় এখন আর বনের ভেতরে আগুনের অস্বিত্ব থাকার শঙ্কা নেই। তারপরও, আমরা আরও ২৪ ঘণ্টা আগুন লাগার স্থান ও আশপাশের এলাকা নজরদারিতে রাখবো।
এদিকে, খুলনা অঞ্চলের বন সংরক্ষক মিহির কুমার দো বলেন, আগুন লাগার স্থান প্রতি ঘণ্টায় ঘণ্টায় ড্রোনের মাধ্যমে মনিটরিং করা হয়েছে। বনভূমির কোথাও আগুনের আলামত পাওয়া যায়নি। পাশাপাশি পায়ে হেঁটে একাধিক টিম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেও আগুনের আলামত পায়নি। পরিদর্শনকালে দেখা যায়, আগুন লাগার স্থানে বৃষ্টির ফলে যথেষ্ট পরিমাণে পানি জমে রয়েছে। সার্বিক অবস্থা পর্যালোচনায় সুন্দরবনের আমরবুনিয়া ক্যাম্পের আওতাধীন বনাঞ্চলের আগুন নিভে গেছে বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
তিনি আরও বলেন, প্রাথমিকভাবে জিপিএস-এর মাধ্যমে আমরা আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা নিরূপনের চেষ্টা করেছি। আগুনে ৭ দশমিক ৯৮ একর বনভূমি আক্রান্ত এবং সাড়ে ৫ একর বনভূমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তদন্ত কমিটির রিপোর্টে বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যাবে।
প্রসঙ্গত, গত ৪ মে বিকেলে সুন্দরবনের আমরবুনিয়া এলাকায় আগুন লাগে। খবর পেয়ে বন বিভাগ, ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ ও উপজেলা প্রশাসন ঘটনাস্থলে যায়। সন্ধ্যা হয়ে যাওয়ায় তারা আগুন নেভানোর কাজ শুরু করতে পারেননি। ৫ মে সকালে ফায়ার সার্ভিস, নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড ও বন বিভাগের নিজস্ব ফায়ার ইউনিট আগুন নেভানোর কাজ শুরু করে। তাদের সহায়তায় এগিয়ে আসে বিমানবাহিনীর হেলিকপ্টার। গতকাল সোমবার (৬ মে) সকাল থেকে আবারও সবার সম্মিলিত চেষ্টায় সুন্দরবনের আগুন নেভানোর কাজ শুরু হয়। আগুন নেভানোর কাজে প্রশিক্ষিত বাহিনীর সঙ্গে যোগ দেন স্থানীয় ৫ শতাধিক বাসিন্দা।
সবার সম্মিলিত চেষ্টায় আগুন পুরোপুরি না নিভলেও, এদিন দুপুর নাগাদ আগুন সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয় ফায়ার সার্ভিস। এরই মধ্যে সন্ধ্যায় মুশলধারে বৃষ্টি নামে। রাতভর বৃষ্টি ও সকালে আমাবস্যার জোয়ারের পানি প্রবেশ করে আগুন লাগা স্থানে। দিনব্যাপী ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে আগুন ও ধোয়ার অস্বিত্ব না পেয়ে অবশেষে সন্ধ্যায় আগুন সম্পূর্ণ নিভে গেছে বলে জানায় বন বিভাগ।