বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় রেমাল কক্সবাজারের উপকূলের দিকে ধেয়ে আসছে। এটি কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৩৬০ কিলোমিটার দক্ষিপশ্চিমে অবস্থান করে এবং ১২০ কিলোমিটার গতিতে আঘাত হানতে পারে বলে আবহাওয়াবিদরা জানিয়েছেন। আবহাওয়া অধিদপ্তরের সর্বশেষ বার্তায় চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরে ৯ নম্বর বিপৎসংকেত দেখাতে হবে।
শনিবার (২৫ মে) বিকেলের পর থেকে কক্সবাজারে রেমালের প্রভাব শুরু হয়েছে। থেমে থেমে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি আর হাওয়া হচ্ছে। তবে কোথাও ঝড়ো হওয়ার খবর পাওয়া যায়নি। সন্ধ্যায় কিছু কিছু জায়গায় উপকুলের বাসিন্দারা আশ্রয়ণকেন্দ্রমুখী হয়েছেন।
পড়ুন: পায়রা-মোংলা বন্দরসহ ৯ জেলায় ১০ নম্বর মহাবিপৎসংকেত
এদিকে, ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে কক্সবাজার থেকে বিমান উঠানামা বন্ধ ঘোষণা করেছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ।
কক্সবাজার বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপক গোলাম মর্তুজা বলেন, দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে বিমান চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে চালু করা হবে।
কক্সবাজার ছাড়ছেন পর্যটকরা ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে পর্যটননগরী কক্সবাজার ছাড়ছেন পর্যটকরা। যে কারণে কক্সবাজারে দেখা দিয়েছে টিকিট সংকট। কক্সবাজারের কোথাও পাওয়া যাচ্ছে না বাসের টিকিট।
কক্সবাজারের কলাতলী ডলফিন মোড়ের কাউন্টার মালিক নুর হোসাইন রাইজিংবিডিকে বলেন, ঘূর্ণিঝড় রেমালের কারণে পর্যটকদের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে। তারা কক্সবাজার ছেড়ে যাচ্ছেন। দূরপাল্লার বেশিরভাগ বাস চলে গেছে। আজ কোনো টিকিট নেই। সব টিকিট বুকিং রয়েছে। বিমান চলাচল বন্ধ করায় টিকিটের চাহিদা আরও বেড়েছে।
এদিকে, কক্সবাজারের ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় মাইকিং করে মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যেতে অনুরোধ জানাচ্ছে প্রশাসন। কক্সবাজারে ৬৩৮টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। মহেশখালীতে আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া শুরু করেছে মানুষ।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান জানিয়েছেন, দুর্যোগ মোকাবিলায় সিপিপির ৮ হাজার ৬০০ এবং রেডক্রিসেন্টের ২ হাজার ২০০ জনসহ ১০ হাজার ৮০০ স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত রাখা হয়েছে। জেলায় প্রস্তুত রাখা হয়েছে ৬৩৮টি আশ্রয়কেন্দ্র। জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে খোলা হয়েছে নিয়ন্ত্রণ কক্ষ। এছাড়া সব সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে।
সেন্টমার্টিনে বেড়েছে পানি, আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে মাইকিং রেমালের প্রভাবে সেন্টমার্টিন বঙ্গোপসাগরে পানি বেড়েছে। শনিবার রাতে কয়েকটি গ্রামে পানি ঢুকেছে। দ্বীপের বাসিন্দাদের আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার জন্য মাইকিং করা হয়েছে।
সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান রাইজিংবিডিকে বলেন, শনিবার রাতে জোয়ারের সঙ্গে বঙ্গোপসাগরে পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পেয়েছিল। এখনো ধমকা হাওয়া সাগরের পানির উচ্চতা বেশি মনে হচ্ছে। দ্বীপের লোকজনকে আশ্রয়কেন্দ্রে সরিয়ে যেতে মাইকিং করা হয়।
কক্সবাজার আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ মো. আবদুল হান্নান বলেন, ঘূর্ণিঝড় রেমাল কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৩৬০ কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিমে অবস্থান করছে। দমকা হাওয়া বয়ে যাচ্ছে। বাতাসের গতিবেগ ১৩০ কিলোমিটার। বর্তমানে ঘূর্ণিঝড়ের বেগ ১২০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ভারী বর্ষণের প্রভাবে কক্সবাজারের পাহাড়ি অঞ্চলের কোথাও কোথাও ভূমিধ্বস হতে পারে। সবাইকে নিরাপদে থাকতে বলা হয়েছে।