নোয়াখালীতে বন্যার কবলে পড়ে অর্ধাহরে দিন কাটছে হরিজন সম্প্রদায়ের। রান্না ঘর তলিয়ে যাওয়ায় চুলায় আগুন জ্বালাতে পারছেন না তারা। ইসকন থেকে পাওয়া এক বেলার খাবার দিয়ে চলছে তাদের পুরো দিন। একই সঙ্গে নলকূপ তলিয়ে থাকায় সুপেয় পানির অভাব দেখা দিয়েছে। বন্যার পানিতে শরীর ভিজে থাকায় এ সম্প্রদায়ের আনেকেই আক্রান্ত হচ্ছেন চর্ম রোগে।
হরিজনরা জানান, নোয়খালী জেলা শহরের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি অফিসে এবং শহর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজে নিয়োজিত রয়েছেন তারা। সকাল থেকে রাত অব্দি কাজ করতে হয় বিভিন্ন জায়গায়। যে পারিশ্রমিক পান তা দিয়েই সংসার চালান তারা। শহরের ব্যস্ততম সড়কের পাশের ইসলামিয়া রোড এলাকায় প্রায় ৫০ শতাংশ জমির ওপর একটি কলোনিতে তাদের বসবাস। বন্যা দেখা দেওয়ার পর একবেলা খাবার পেলেও অন্যবেলা না খেয়ে থাকতে হচ্ছে হরিজন সম্প্রদায়কে। সুপেয় পানির অভাবে তারা নানা রকম ব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছেন। বন্যার পানিতে শরীর ভিজে থাকায় এই সম্প্রদায়ের অনেকে চর্ম রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন।
বুধবার (২৮ আগস্ট) সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, হরিজন সম্প্রদায়ের কলোনি পানিতে তলিয়ে রয়েছে। কলোনির কোথাও হাটুঁ আবার কোথাও এর চায়ে বেশি পানি জমে রয়েছে। পরিবার নিয়ে খুবই অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে দিন কাটাচ্ছেন তারা। কষ্টে আছে শিশু, বয়স্ক ও অসুস্থরা। এক বেলা তাদের ইসকন থেকে খাবার সরবারাহ করা হয়। অন্য বেলা তাদের থাকতে হয় না খেয়ে। ফলে এক রকম মানবেতর জীবন অতিবাহিত করছেন নোয়াখালীর হরিজন সম্প্রদায়।
কলোনির বাসিন্দা প্রতিমা হরিজন বলেন, ‘আমরা খুবই কষ্টে আছি। এক বেলা খাবার পাচ্ছি। অন্য বেলা না খেয়ে থাকার মতো। শিশুদের নিয়ে বিপদে আছি।’
শোভা হরিজন বলেন, ‘আমরা প্রতি বর্ষায় জলাবদ্ধতার সম্মুখীন হই। এ বছর বন্যায় দেখা দেওয়ায় আমাদের দুর্ভোগ অনেক বেড়েছে। এক বেলা খাবার পাচ্ছি। রান্নাঘরে পানি থাকায় চুলা জ্বালানো যাচ্ছে না। ইসকন থেকে একবেলা খাবার পাই। অপর বেলা উপোস করে থাকতে হয়। ইতোমধ্যে আমাদের অনেকের চর্মরোগ দেখা দিয়েছে।’
সোহাগ হরিজন বলেন, ‘কোনো রকমে দিন পার করছি। ঘরের সামনে হাঁটু সমান পানি। অবস্থা খুবই নাজুক।’
আকাশ হরিজন বলেন, ‘পানি থাকায় আমরা খুবই কষ্টে আছি। অন্য কোথাও থাকার জায়গাও নেই। আমাদের কেউ আশ্রয়ও দেবে না। অসুস্থ যারা তারা বেশি সমস্যায় আছেন।’
হরিজন সম্প্রদায় কলোনির সর্দার গণেশ হরিজন বলেন, ‘আমরা সমাজের নিম্ন শ্রেণির কাজ করি। আমাদের সেভাবেই দেখা হয়। সমাজে আমরা অবহেলিত। আমরাও মানুষ, আমাদেরও পেট আছে, জীবন আছে। এই বন্যায় আমরা খুবই মানবেতর জীবনযাপন করছি। কেউ আমাদের খবর নিচ্ছে না। এক বেলা খাবার পাচ্ছে এই কলোনির বাসিন্দারা। অন্য বেলা না খেয়ে থাকতে হয়। কোনো সহযোগিতা এখন পর্যন্ত পাইনি। অন্যান্য জায়গায় যেভাবে সহায়তা করা হয়, এখানে কেউই আসছে না।’
নোয়াখালীর সিভিল সার্জন ডা. মাসুম ইফতেকার বলেন, ‘বৃহস্পতিবার (২৯ আগস্ট) হরিজন কলোনিতে মেডিক্যাল টিম পাঠানো হবে।’
নোয়াখালীর জেলা প্রশাসক দেওয়ান মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘আমি আপনার কাছ থেকে তাদের (হরিজন সম্প্রদায়) মানবেতর জীবনের কথা শুনলাম। আমাকে কেউ তাদের বিষয়ে জানায়নি। আমি তাদের সহযোগিতার বিষয়ে ব্যবস্থা নেবো।’