বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে ঘর। পানি থাকায় সেখানে বসবাস করা কঠিন হয়ে পড়েছে। সেই সঙ্গে দেখা দিয়েছে সাপের উপদ্রব। ফলে নিজের ও পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিতে রাত হলেই বেড়িবাঁধে আশ্রয় নিচ্ছেন নারী-পুরুষরা। ভোর পর্যন্ত তারা সেখানে বসে একে অন্যের সঙ্গে গল্প করে কাটাচ্ছেন সময়। দিনের আলো ফুটলে ঘরে ফিরে করছেন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ। গত কয়েকদিন ধরে এভাবেই দিন কাটছে লক্ষ্মীপুরের বেড়িবাঁধ পাড়ের বাসিন্দাদের।
রোববার (১ সেপ্টেম্বর) রাতে জেলার তোরাবগঞ্জ-ফজুমিয়ার হাট-রামগতি বেরিবাঁধ ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
সরেজমিনে গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে রামগতি উপজেলার চর আলগী ইউনিয়নের স্লুইস গেইট বাজারের আধা কিলোমিটার পশ্চিমের ২ নম্বর ওয়ার্ড গিয়ে দেখা যায়, কয়েকটি পরিবার বাঁধে থাকেছেন। বাঁধের উত্তর পাশ ঘেঁষে তাদের বাড়ি। এই বাড়িগুলোর উঠানে হাঁটু পর্যন্ত বন্যার পানি রয়েছে। ঘরের ভেতরেও পানি প্রবেশ করেছে। যে কারণে পাশাপাশি কয়েকটি পরিবারের ১০-১২ জন নারী-পুরুষ নিরাপদে রাত কাটাতে বাঁধের ওপরে আশ্রয় নিয়েছেন।
এদের একজন সাজিয়া বেগম। তার বয়স ৫২ বছর। স্বামী সিরাজ মিয়া কৃষি কাজ করে সংসার চালন। প্রায় ১ মাস ধরে তার পরিবার পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছেন। পানিবন্দি জীবনের নানা কষ্টের কথা বলেন তিনি।
সাজিয়া বেগম, ‘ঘরে-বাইরে সব জায়গায় পানি। বেড়িবাঁধের পাশে বাড়ি হওয়ায় আশ্রয়কেন্দ্রে যাইনি আমরা। কষ্ট করে ঘরে থেকেই দিনের সময়টুকু পার করছি। সংসারের কাজকর্ম করি পানির ওপর দিয়ে হাঁটাচলা করেই। রাতের বেলায় তেমন কোনো কাজ থাকে না। রাতে পানির মধ্যে ঘরের ভেতর হাঁটা চলা করা খুব কষ্টের। পাশাপাশি সাপের উপদ্রব তো রয়েছেই। তাই সন্ধ্যা নামলেই বাঁধে উঠে আসি আমরা। রাত জেগে গল্পগুজব করি। ভোরের দিকে ঘরে ঢুকে কোনো রকম ঘুমানোর চেষ্টা করি।’
শাহিনুর বেগম নামে অপর নারী বলেন, ‘ঘরের হাঁড়িপাতিল থাকে টেবিলের ওপর। টেবিল আর চৌকি কয়েকটি ইটের ওপর উঁচু করে রাখা আছে। ঘরে ঢুকেই চৌকিতে উঠে পড়তে হয়। যতক্ষণ ঘরে থাকা হয়, ততক্ষণ চৌকিতেই শুয়ে বসে থাকতে হয়। রাতে স্যাঁতসেঁতে চৌকিতে ঘুম হয় না।’
মনোয়ারা বেগম বলেন, কি করমু, ঘুম আসে না। ঘরে পানির মইধ্যে ভালোও লাগে না। তাই ঘর থেকে বের হয়ে আসি রাতে। বলতে গেলে বেড়িবাঁধে বসেই আমরা কয়বাড়ির মানুষ রাতের বেশিরভাগ সময় কাটাই ফেলি।’
আজাদ উদ্দিন নামে বয়োবৃদ্ধ বলেন, কয়েকদিন থেকে রাত হলেই আমরা প্রতিবেশী সবাই বেড়িবাঁধে আসি। রাতের বেলায় বেড়িবাঁধেই আমাদের ঘর। এই বাঁধের দুই পাশে দুই চিত্র। বাঁধের উত্তর পাশে আমাদের সবার বাড়ি পানিবন্দি। অথচ দক্ষিণ পাশের খেতগুলো শুকনো।’
কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘দক্ষিণের পানি সরাসরি মেঘনায় নেমে যায় দ্রুত। উত্তর থেকে পানি নামার খাল-নালার প্রায় সব দখল হয়ে গেছে। তাই এদিক থেকে পানি সহজে নামতে চায় না।’
প্রসঙ্গত, লক্ষ্মীপুরে ধীর গতিতে বন্যার পানি নামতে শুরু করেছে। তবে এখনো পানিবন্দি মানুষের সংখ্যা কয়েক লাখ। এদের অনেকে আশ্রয়কেন্দ্রে থাকলেও বেশিরভাগ মানুষ বাড়ি ছেড়ে আশ্রয়কেন্দ্রে যাননি।